সুনসান: এখানেই ঘটেছিল গণপিটুনির ঘটনা। নিজস্ব চিত্র
গণপিটুনির মামলায় এক জন মহিলা-সহ ১২ জনের আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়কে অত্যন্ত জরুরি ও তাৎপর্যপূর্ণ নজির বলে মনে করছেন প্রাক্তন বিচারকেরা। জেলা পুলিশেরও দাবি, এই রায় কার্যত ‘মাইলফলক’।
কালনা আদালতের সরকারি আইনজীবী বিকাশ রায় বলেন, ‘‘এ রাজ্য নয়, সারা দেশে গুজবের বলি হয়ে বহু নিরীহ মানুষ গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। আশা করি, এই রায়ের পরে অনেকের চোখ খুলবে। গুজবকে কেন্দ্র করে মানুষের আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বন্ধ হবে।’’ কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি আব্দুল গনিও মনে করেন, “এই রায়ের পরে আশা করা যায়, মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না।’’
আইনজীবীরা জানান, জেলায় গত এক বছর ধরে ‘ক্রাইম মনিটরিং সেল’ রয়েছে। কালনার ঘটনার জন্য জেলা পুলিশের সিনিয়র অফিসরদের নিয়ে খোলা হয়েছিল ‘ট্রায়াল মনিটরিং সেল’। এই সেলের পুলিশ আধিকারিকেরা সাক্ষীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন। কালনা থানার তদন্তকারী আধিকারিকদেরও দাবি, এই মামলার তদন্ত ‘খুব কঠিন’ ছিল। দোষীরা প্রত্যেকে স্থানীয় হওয়ায় প্রত্যক্ষদর্শীদের মনেও ভয় ছিল। তাঁদের আশ্বস্ত করা গিয়েছে বলেই তাঁরা ‘টিআই প্যারেড’-এ দোষীদের শনাক্ত করেছেন, বিচারকের সামনেও দোষীদের দেখিয়ে দিয়েছেন।
পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “সাক্ষীদের নিরাপদ রেখে অভিযুক্তরা যে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত সেটা প্রমাণ করা কঠিন ছিল। সে দিক থেকে এই রায় আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’ কালনা আদালতের প্রবীণ আইনজীবী মলয় পাঁজার বক্তব্য, ‘‘অত্যন্ত দ্রুত গতিতে আদালত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করেছে। গণপিটুনির ঘটনায় এর আগে এত বড় রায় রাজ্যে হয়েছে বলে জানা নেই।’’
এই রায়ের প্রভাব সমাজে পড়বে বলে মনে করছেন জেলার আর এক প্রাক্তন বিচারক, বর্ধমানের বাসিন্দা সব্যসাচী বিশ্বাসও। তিনি বলেন, “এ সব ঘটনায় সাক্ষ্যের অভাবে অভিযুক্তেরা খালাস হয়ে যায়। সেখানে এই রায় মানুষের মনে কিছুটা হলেও ভয় ধরাবে। হুজুগে মেতে ওঠার আগে ভাববেন মানুষ।’’ বর্ধমানের প্রাক্তন জেলা জজ পবনকুমার মণ্ডলের প্রস্তাব, “এই রায়কে সামনে রেখে মানুষকে সচেতন করতে হবে। গণরোষ যে কোনও বিষয়ের সমাধান নয়, বোঝাতে হবে।’’