মাছের জন্য লটারি তখনও চলছে। ছবি: অর্পিতা মজুমদার
মাছ কিনতে সকাল-সকাল বাজারে গিয়েছিলেন চায়ের দোকানদার অম্বুজ মাহাতো। মাত্র পঞ্চাশ টাকা খরচ করে হাতে পেয়ে যাবেন সাড়ে সতেরো কিলোগ্রামের আস্ত একটি কাতলা, সুদূর কল্পনাতেও ছিল না তাঁর।
পাড়ার লটারি প্রতিযোগিতায় টর্চ থেকে শুরু করে মোটরবাইক—পুরস্কার হিসেবে থাকে নানা রকম জিনিসই। কিন্তু লটারির পুরস্কার হিসেবে মিলবে বিশালাকার মাছ, বৃহস্পতিবার সকালে এ খবর জানাজানি হতেই শোরগোল পড়ে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের ডেলি মার্কেটে।
এ দিন সকালে দুর্গাপুর ব্যারাজে কয়েক জন মৎস্যজীবীর জালে ধরা পড়ে বড় কাতলাটি। তাঁরা সেটি নিয়ে আসেন বাজারে। কিন্তু, এত বড় মাছ ক্রেতারা আদৌ পছন্দ করবেন কি না, সেই সংশয়ে কোনও মাছ ব্যবসায়ী কাতলাটি কিনতে রাজি হচ্ছিলেন না। বিপাকে পড়েন মৎস্যজীবীরা। তখনই এগিয়ে আসেন জনা ছয়েক যুবক। মনোজ কর্মকার, সন্তোষ জানাদের বাজারে নানা রকম দোকান রয়েছে। তাঁরা জানান, মাছটি বিক্রি হচ্ছে না দেখে সেটি নিয়ে লটারির ভাবনা মাথায় আসে। দরদাম করে মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে চার হাজার টাকায় মাছ কিনে নেন তাঁরা।
তার পরে লটারির প্রস্তুতি শুরু। গাঁদার মালা পরিয়ে মাছটিকে রাখা হয় বরফের চাঁইয়ের উপরে। টিকিটের দাম লেখা পোস্টার ঝুলিয়ে মাইকে প্রতিযোগিতার কথা ঘোষণা করতে থাকেন মনোজবাবুরা। ভিড় জমতে শুরু করে। কাগজে নম্বর লিখে টিকিট হিসেবে বিক্রি করা হয়। উৎসাহে টিকিট কেটে ফেলেন বাজার করতে আসা অনেকেই। নন-কোম্পানি এলাকার রাজু বর্মণ বলেন, “মাছ যে লটারির পুরস্কার হতে পারে, শুনিনি। টিকিট কেটে ফেলেছি।” সন্তোষবাবু জানান, ৮০টি টিকিট বিক্রি হতেই তাঁরা যে দামে মাছ কিনেছিলেন তা উঠে যায়। তার পরে আর অপেক্ষা করেননি। তিনি বলেন, “আমরা তো আর লাভ করার জন্য লটারির আয়োজন করিনি। ক্রেতা-বিক্রেতা সকলে মিলে একটু আনন্দ করা গেল, এতেই আমরা খুশি।”
লটারিতে যে নম্বর ওঠে, সেটি অম্বুজবাবুর। লটারির উত্তেজনায় যে ভাবনা এত ক্ষণ মাথায় আসেনি, মাছ জিতে নেওয়ার পরে তা খেয়াল হতেই মুশকিলে পড়েন তিনি। এত বড় মাছ নিয়ে করবেন কী? বেশ বিড়ম্বনায় পড়ে যান। শেষে মনে পড়ে পরিচিত হোটেল মালিক কার্তিক পালের কথা। দুর্গাপুর আদালত চত্বরে হোটেল চালান তিনি। অম্বুজবাবু ফোন করে ঘটনাটা জানালে ১৪০ টাকা কিলো দরে কিনতে রাজি হন তিনি। হাঁফ ছাড়েন অম্বুজবাবু।
কার্তিকবাবু বাজারে আসার পরে মাছটি কেটে ফেলা হয়। অম্বুজবাবু নিজে আড়াই কিলো রাখেন। মাছ ব্যাগে ভরে কার্তিকবাবু মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরে অম্বুজবাবু বলেন, “দরাদরি করলে আরও বেশি দাম পেতাম। যাক গে, আমি তো আর মাছের ব্যবসা করি না। পঞ্চাশ টাকা খরচ করে দু’হাজারের বেশি লাভ করলাম। দিন দশেকের মাছ কেনার টাকা উঠে গেল আমার।” এক গাল হেসে বাড়ির পথে পা বাড়ালেন তিনি।