সবুজ সমিতির মণ্ডপের ‘থিম’ ‘এক টুকরো সুখের খোঁজে’। নিজস্ব চিত্র
কোথাও রঙবেরঙের পালকে সেজেছে প্রতিমা, কোথাও ‘মন্দিরের শহরে’ মণ্ডপের সাজেও প্রাধান্য পেয়েছে সে আদল। গত দু’বছর করোনা পরিস্থিতির জন্য কালনার সরস্বতী পুজোর জৌলুস অনেকটাই কম ছিল। এ বার অবশ্য বেশির ভাগ ক্লাবেরই প্রস্তুতি তুঙ্গে।
১০৮ শিবমন্দির লাগোয়া স্পুটনিক-৭০ ক্লাবের প্রতিমা তৈরি হচ্ছে দেশি, বিদেশি ৭০ হাজার রঙিন পালক দিয়ে। মাসখানেক ধরে শিল্পী অরিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তৈরি করছেন মূর্তিটি। তিনি জানান, মাটির প্রতিমা গড়ে তার উপরে পালক দিয়ে সাজানো হচ্ছে। রাজহাঁস, বক, ময়ূর থেকে মুরগির পালকও ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা থেকে আসা বিদেশি পাখির পালকও লাইসেন্স প্রাপ্ত বিক্রেতাদের কাছ থেকে কেনা হয়েছে। উদ্যোক্তারা জানান, এ বার স্বাধীনতার ৭৫ বছর। সে কথা মাথায় রেখে জাতীয় সঙ্গীতকে মণ্ডপের ‘থিম’ করা হচ্ছে। মণ্ডপের ভিতরে ঢুকলেই দেখা যাবে স্বাধীনতা সংগ্রামী, শিল্পী, সাহিত্যিকদের ছবি।
চারাবাগান সবুজ সমিতির ‘থিম’ ‘এক টুকরো সুখের খোঁজে’। এ বার ৫০ বছরে পা দেওয়া ক্লাবের মণ্ডপে পা দিলেই দেখা মিলবে চাঁদ, আকাশ, পাখি, পদ্মফুলের। ফোম, ফাইবার, নেট দিয়ে সেই ‘সুখ’ বুনছেন শহরের আর এক শিল্পী প্রভাত বৈদ্য।
ক্লাবের তরফে লাল্টু সাহা বলেন, ‘‘মানুষের জীবনে প্রকৃতি কতটা জরুরি, তার আঁচ মিলবে আমাদের মণ্ডপে। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে স্যানিটাইজ়ার গেটও করা হচ্ছে।’’
এই শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অজস্র পুরনো মন্দির। সারা বছর পর্যটকেরা আসেন তার টানে। বারুইপাড়া দক্ষিণ বারোয়ারির থিম তার সঙ্গে মিলিয়ে অসমের কামাখ্যা মন্দির। একটি পুকুরের উপরে বিশালাকার মণ্ডপটি সেজে উঠছে। উদ্যোক্তরা জানিয়েছেন, মূল মন্দির ছাড়াও, দু’টি নাটমঞ্চ, গর্ভগৃহ-সহ খুঁটিনাটি সমস্ত কিছু ফুটিয়ে তোলা হবে। ক্লাবের তরফে সুজয় সাহা বলেন, ‘‘এর আগে সরস্বতী পুজোতে বৃন্দাবনের প্রেম মন্দির, তারাপীঠের মন্দির, তারকেশ্বরের মন্দির, কেদারনাথের মন্দির ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এ বার দর্শকদের কামাখ্যা মন্দিরের ছোঁয়া দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ তিনি জানান, বহু বয়স্ক এবং অক্ষম মানুষ রয়েছেন যাঁদের বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা নেই। আবার করোনার জন্যও অনেকে ঘুরতে যেতে পারছেন না। তাঁরা যাতে মণ্ডপেই ভ্রমণের স্বাদ পান, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্থায়ী প্রতিমা গড়েছে শহরের সূর্য সমিতি ক্লাব। ভিয়েতনামের পাথর দিয়ে তৈরি প্রতিমাটির উচ্চতা পাঁচ ফুট। ওজন ছয় কুইন্টাল। মূর্তিটি তৈরি করতে খরছ হয়েছে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। টানা তিন মাস ধরে রাজস্থানের এক শিল্পী গড়েছেন সেটি।
কালনা পুরসভার প্রশাসক আনন্দ দত্ত বলেন, ‘‘সরস্বতী পুজো এমন একটা উৎসব, যেখানে সবাই সবাইকে ছাপিয়ে যেতে চায়। করোনা-বিধি মেনে পুজো করা তিনটি ক্লাবকে পুরস্কার দেবে পুরসভা।’’