ব্যাগ হাতে সুপ্রিয়বাবু। নিজস্ব চিত্র
নিজের নাম দিয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগ ছাপিয়ে তার ভিতরে দুঃস্থদের খাদ্যসামগ্রী বিলি করে বিতর্কে জড়ালেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির উপ-পুরপ্রধান সুপ্রিয় সামন্ত। বিষয়টি নিয়ে দলের যুব সংগঠনের এক নেতা নাম না করে ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য় কটাক্ষ করেছেন। বিরোধীদেরও দাবি, সাহায্যের নামে সুযোগ বুঝে রাজনীতি করছেন তৃণমূলের ওই নেতা। যদিও এ সবে পাত্তা দিতে নারাজ সুপ্রিয়বাবু। তাঁর কথায়, “কে, কোথায় আমার নাম দিয়ে ব্যাগ ছাপিয়েছে, তা ভাবার সময় এখন নেই। ‘লকডাউন’-এর সময় মানুষ অসহায়। তাঁদের পাশে দাঁড়ানোটাই একমাত্র কর্তব্য।’’
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে নিজের ওয়ার্ড (১০ নম্বর) কার্যালয়ের সামনে ফুটপাথের উপরে টেবিল পেতে দুঃস্থদের খাদ্যসামগ্রী দেন ওই নেতা। লম্বা লাইনে সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যবিধান মানার কোনও ব্যাপার ছিল না বলেও অভিযোগ। শুধু ১০ নম্বর নয়, শুক্রবার শহরের আরও দু’টি ওয়ার্ডেও সুপ্রিয়বাবু একই ভাবে খাদ্যসামগ্রী বিলি করেছেন। খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার জন্য যে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে, তার উপরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া আছে। আর লেখা রয়েছে, ‘মাননীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ’। আর মুখ্যমন্ত্রীর ছবির নীচে মোটা হরফে লেখা হয়েছে, সুপ্রিয় সামন্ত। তার নীচে উপপুরপ্রধান, মেমারি পুরসভা বলে লেখা রয়েছে।
তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, ওই রকম প্লাস্টিক ব্যাগে উপপুরপ্রধানের নাম দেখে দলের শিক্ষক সংগঠনের এক নেতা ও ছাত্র নেতা একই কায়দা অনুসরণ করেছেন। তাঁরা মেমারির গোষ্ঠী-রাজনীতিতে উপপুরপ্রধানের অনুগামী বলে পরিচিত।
তৃণমূলের ওই যুব নেতা তাঁর ‘সোশ্যাল মিডিয়া’র দেওয়ালে নাম না করে লিখেছেন, “...কিছু মানুষ নিজের নাম লেখা কাগজে এমন ভাবে খাদ্য সামগ্রী বিলি করছেন, তাতে মনে হচ্ছে দিদি যেন ঘরে বসে আছেন।...কিছু লোক রাজনীতি করার জন্য যা করছেন, তা বন্ধ হওয়া দরকার’।’’ সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “এই সময় মানুষ সত্যিই অসহায়। তাঁদের সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়।’’ বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য ভীষ্মদেব ভট্টাচার্যও বলেন, “নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রাজনীতি করার লক্ষ্যেই সাহায্য করা হচ্ছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে।’’
যদিও সুপ্রিয়বাবুর জবাব, “ব্যাগ আমি ছাপাইনি। কেউ হয়তো অতি উৎসাহে করে ফেলেছেন। কিন্তু এ সব এখন দেখব, না কি আমার কাছে প্রতিদিন যে তিনশো জন করে থাকছেন, তাঁদের দু’বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করব?’’ তাঁর দাবি, ‘‘যাঁরা মানুষের পাশে থাকছেন না, তাঁরাই অকারণে বিতর্ক টেনে আনছেন।’’