lock down

ওষুধের জন্য দোকানে দোকানে ছুটোছুটি

ওষুধের সমস্যা দেখা দিয়েছে দুর্গাপুর মহকুমাতেও। দুর্গাপুরে জীবনদায়ী ওষুধের অভাব দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। তাঁরা জানান, কোথাও ওষুধ মিলছে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২০ ০৪:৩৮
Share:

ছবি: শাটারস্টক

আট বছরের ছেলের হাঁচি, সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের চেম্বারে ছুটেছিলেন আসানসোলের কল্যাণপুরের বাসিন্দা এক ব্যক্তি। রোগী দেখে ‘প্রেসস্ক্রিপশন’ লিখে দেন চিকিৎসক। কিন্তু ওষুধ জোগাড় করতে গিয়ে কালঘাম ছুটল। গোটাকয়েক ওষুধের দোকান ঘুরেও সব ওষুধ মিলল না। ফের তিনি চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। নিজের কাছে থাকা ওষুধ দিয়ে ওই ব্যক্তির সমস্যা মেটালেন চিকিৎসক। ওষুধের এমন ‘আকাল’ পশ্চিম বর্ধমানের প্রায় সর্বত্রই।

Advertisement

‘লকডাউন’-এর সময়ে শহরে কিছুটা হলেও ওষুধের জোগান কমবে এই আশঙ্কা করেছিলেন আসানসোল রাহালেনের পাইকারি ওষুধ দোকানের মালিকেরা। আসানসোল ইএসআই হাসপাতালের সুপার তথা ‘ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স’-এর আসানসোল শাখার সভাপতি অতনু ভদ্র বলেন, ‘‘ওষুধ পেতে সমস্যা হচ্ছে বলে অনেকেই জানাচ্ছেন। আমরা তাই চিকিৎসকদের কাছে মজুত থাকা ওষুধ এক জায়গায় জড়ো করে রোগীদের দিচ্ছি।’’

শহরে এখনই সব ওষুধ যে মিলছে না তা স্বীকার করে নিয়েছেন চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্তও। আসানসোল ব্লাড ব্যাঙ্কের চিকিৎসক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সাধারণ ওষুধ কিছু কিছু জোগাড় করে দিচ্ছি। কিন্তু জীবনদায়ী ওষুধের আকাল হলে রক্ষা নেই।’’ চাহিদা ও জোগানের মধ্যে যাতে সামঞ্জস্য বজায় থাকে, সে জন্য ওষুধের পাইকারদের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানালেন অতনুবাবু।

Advertisement

ওষুধের সমস্যা দেখা দিয়েছে দুর্গাপুর মহকুমাতেও। দুর্গাপুরে জীবনদায়ী ওষুধের অভাব দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। তাঁরা জানান, কোথাও ওষুধ মিলছে না। মিললেও যতগুলি কিনতে এসেছেন ততগুলি দেওয়া হচ্ছে। শহরের বিভিন্ন ওষুধের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সাধারণ ওষুধ মজুত আছে। তবে সমস্যা দেখা দিচ্ছে হার্ট, সুগার, প্রেশারের ওষুধ নিয়ে। বেনাচিতির একটি দোকানে প্রেশার ও সুগারের ওষুধ কিনতে গিয়েছিলেন প্রবীণ বাসিন্দা অমিতাভ বসু। তিনি বলেন, ‘‘প্রেশারের ওষুধ পেয়েছি। তবে সুগারের ওষুধ পাইনি। অন্য দোকানে দেখতে হবে!’’ সিটি সেন্টারের একটি দোকান থেকে বেরিয়ে নন-কোম্পানি এলাকার বাসিন্দা হৃদরোগী সুখময় রায় বললেন, ‘‘এক মাসের ওষুধ নিতে এসেছিলাম। দশ দিনের পেয়েছি।’’

বিভিন্ন দোকান মালিকেরা জানিয়েছেন, ‘লকডাউন’-এর জন্য সরবরাহে সমস্যা দেখা দেয়। প্রথম দিকে সমস্যা হঠাৎ বেড়ে গিয়েছিল। তাঁদের দাবি, তবে গত কয়েকদিনে আবার সরবরাহ শুরু হওয়ায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ‘লকডাউন’-এর সময়ে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পেতে সমস্যা না হয়, সে দিকটি নজরে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেও সমস্যা হচ্ছে কেন? দোকান মালিকেরা জানান, অনলাইনে ওষুধ না পাওয়ায় দোকানে ভিড় বেড়েছে। কিছু ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। ‘লকডাউন’-এর জেরে বিদেশ থেকে ওষুধ আনায় সমস্যা হচ্ছে। সব মিলিয়ে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ফারাক দেখা যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ‘বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর দুর্গাপুর জ়োনের সভাপতি জয়দেব কুণ্ডু বলেন, ‘‘হঠাৎ লকডাউন হওয়ায় স্বাভাবিক পরিবহণ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়। তাই বিভিন্ন জীবনদায়ী ওষুধের সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। পরের দিকে ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে ওষুধ কোম্পানিগুলি যোগাযোগ করে বিশেষ গাড়ি ও কুরিয়ারের মাধ্যমে ওষুধ পাঠাতে উদ্যোগী হয়।’’ সংগঠনের জেলা সম্পাদক অমিতাভ রায়ও বলেন, ‘‘লকডাউন ঘোষণার দিন সাতেক পরে ওষুধের বাজারে সামান্য টান পড়েছিল। এখন অবশ্য বাজারে ওষুধের পর্যাপ্ত জোগান আছে। জীবনদায়ী ওষুধের কোনও টান এখনও নেই।’’
অমিতাভবাবু জানান, আসানসোল বাজারে ন’টি পরিবহণ সংস্থা আছে যাঁরা শহরে নিয়মিত ওষুধ আনে। প্রথম দিকে সেগুলি বন্ধ ছিল বলে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। ছ’টি পরিবহণ সংস্থা বুধবার থেকে কাজ শুরু করেছে। এ ছাড়া, কিছু কুরিয়ার সংস্থা সরকারি ওষুধের কোম্পানি থেকে আসানসোল বাজারে ওষুধ দিয়ে যায়। কর্মীর অভাবে সেই কুরিয়ার সংস্থাগুলি কাজ করতে পারছে না। তাই কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। তাঁর দাবি, কিছু ক্রেতা অযথা আশঙ্কায় ভুগে বেশি পরিমাণে ওষুধ মজুত করতে চাইছেন। এই প্রবণতার ফলে বাজারে কিছুটা ‘ছদ্ম অভাব’ হচ্ছে। তাই সমস্ত দোকান মালিকদের চিকিৎসকদের প্রেসস্ক্রিপশনের ফটো কপি নিয়ে ওষুধ দিতে বলা হয়েছে। তাতে লেখা পরিমাণের বেশি কাউকেই ওষুধ দিতে নিষেধ করা হয়েছে।

দুর্গাপুরের মেয়র পারিষদ রাখি তিওয়ারিও বলেন, ‘‘পরিবহণের সমস্যা না কি কেউ অসাধু উদ্দেশ্যে ওষুধ মজুত করে রেখেছেন, খোঁজ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement