এটিএমে গুলির চিহ্ন ও রক্তের দাগ। নিজস্ব চিত্র
বার্নপুরে এটিএম লুটের ঘটনায় জড়িতদের হদিস মেলেনি বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত। তবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সূত্র পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, দুষ্কৃতীদের ওই দলটি বহিরাগত। কিন্তু এলাকার কেউ তাদের তথ্য সরবরাহ করেছে। লুটের আগে অন্তত বারকয়েক দুষ্কৃতীরা খোঁজখবর করেছে। তবে কত টাকা লুট হয়েছে সে বিষয়ে পুলিশ কিছু জানায়নি। এ দিকে, দুষ্কৃতীদের গুলিতে জখম ব্যক্তির অবস্থা স্থিতিশীল বলে আসানসোল জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত ৮টা নাগাদ হিরাপুর থানার বার্নপুরের রিভারসাইড অঞ্চলের ডিআই কলোনি লাগোয়া ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টারে টাকা ভরতে এসেছিলেন কর্তব্যরত কর্মীরা। সেই সময়ে তিন দুষ্কৃতী হামলা চালায় বলে অভিযোগ। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে চালক প্রদীপ রুইদাস জানিয়েছেন, প্রথমে তাঁর মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে গাড়ির চাবি কেড়ে নেয় এক দুষ্কৃতী। আর এক দুষ্কৃতী গাড়ির নিরাপত্তারক্ষী সব্যসাচী বন্দ্যোপাধ্যায়কে বন্দুক ঠেকিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখে। তৃতীয় জন রিভলভার নিয়ে এটিএম কাউন্টারে ঢুকে যায়। তখন এটিএমে টাকা ভরছিলেন মাকসুদ আলম। ওই দুষ্কৃতী তাঁর হাতে গুলি করে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। পুরো কাজটি মাত্র আড়াই মিনিটের মধ্যে শেষ করে দুষ্কৃতীরা শূন্যে গুলি চালিয়ে চম্পট দেয়। দুষ্কৃতীদের মুখে মাস্ক ছিল। এক জনের মাথায় হেলমেট ও এক জনের মাথায় গামছা বাঁধা ছিল।
ব্যাঙ্ক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, এই এটিএম কাউন্টারে প্রতিদিন রাতে টাকা ভরতে আসে দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি বেসরকারি আর্থিক সংস্থা। পুলিশের অনুমান, বুধবার টাকার গাড়ির পিছনে দুষ্কৃতীরা মোটরবাইকে করে এসে কাউন্টার থেকে কিছুটা দূরে অপেক্ষা করছিল। টাকার ব্যাগ নিয়ে এক কর্মী ভিতরে ঢুকতেই তারা হামলা চালায়। তবে প্রাথমিক তদন্তের পরে কয়েকটি প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের মনে। প্রথমত: এটিএম কাউন্টারের গেটের মুখে গাড়িটি লাগানোর কথা থাকলেও তা সেখান থেকে প্রায় পাঁচ মিটার দূরে দাঁড় করানো হয়েছিল। দ্বিতীয়ত: নিরাপত্তারক্ষী গাড়ি থেকে প্রায় ১৫ মিটার দূরে চলে গিয়েছিলেন। তৃতীয়ত: টাকার ব্যাগ নিয়ে ভিতরে ঢোকার পরে ওই ব্যক্তি কাউন্টারের শাটার ‘লক’ করেননি কেন!লুটের খবর পেয়েই বুধবার রাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছন ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বার্নপুর শাখার চিফ ম্যানেজার অখিলেশ কুমার। এই বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কাউন্টারে টাকা ভরার দায়িত্ব একটি বেসরকারি সংস্থাকে ঠিকা দেওয়া হয়েছে।
এ দিকে, এই ঘটনার পরে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যে বাড়িতে ওই এটিএম কাউন্টারটি রয়েছে, তার গৃহকর্তা সুব্রত সিংহ বলেন, ‘‘এমন কাণ্ডে আগে কখনও দেখিনি!’’ ঘটনাস্থলের পাশেই রয়েছে দু’টি বড় দোকান। তার মালিক জয়ন্ত দুবে বলেন, ‘‘ওই সময়ে কয়েকজন এটিএম থেকে টাকাও তুলতে এসেছিলেন। কিন্তু দুষ্কৃতীরা যে ভাবে গুলি ছুড়ছিল, ভয়ে কেউ বাধা দেওয়ার সাহস পাননি।’’ আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের খোঁজ চলছে। যে তিন জন ওই এটিএমে টাকা ভরতে এসেছিলেন তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে।’’ ঘটনাস্থলের উল্টোদিকে বসানো একটি সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে দুষ্কৃতীদের গতিবিধি ও তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ।