সভা: দুর্গাপুরের সৃজনী প্রেক্ষাগৃহে সূর্যকান্ত মিশ্র। নিজস্ব চিত্র
তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষ না করেই দুর্গাপুরে পুরভোটে বামফ্রন্ট প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিয়েছে দাবি করে ক্ষোভ প্রকাশ করল কংগ্রেস। দলের জেলা শিল্পাঞ্চল সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘একতরফা ভাবে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে বামফ্রন্ট। দলের প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীর নির্দেশে দুর্গাপুরের ৪৩টি ওয়ার্ডেই প্রার্থী দেবে কংগ্রেস।’’
শনিবার বিকেলে সিটি সেন্টারে ভিড়ে ঠাসা সৃজনী প্রেক্ষাগৃহে ইস্তাহার প্রকাশ করে বামফ্রন্ট। ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি বলেন, ‘‘কে মেয়র হবেন, কে কাউন্সিলর হবেন, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের কাছে নির্বাচন মানে রাজনৈতিক সংগ্রাম, নীতির প্রশ্নে লড়াই। পদের জন্য নয়।’’ তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্র ও রাজ্যের জনবিরোধী নীতির ফলে দুর্গাপুরে একের পর এক কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কাজ হারাচ্ছেন হাজার-হাজার মানুষ। সিবিআই, ইডি, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ-প্রশাসনের ভরসায় বসে না থেকে মানুষের নিজেদের লড়াই নিজেদেরই লড়ার ডাক দেন তিনি।
এ দিন সূর্যকান্তবাবু দলের কর্মীদের পুরভোটের জন্য তৃণমূল, বিজেপি— সবার সমর্থকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘‘এখন কেউ শখ করে তৃণমূলকে ভোট দেন বলে মনে করি না। দুর্গাপুরের যা উন্নয়ন তা ১৫ বছরের বামেদের বোর্ড করেছিল। এখানকার মানুষ সেটা দেখেছেন। তাই দুর্গাপুর বাঁচাতে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলকে উৎখাত করতে হবে।’’ ইস্তাহার নিয়ে বাড়ি-বাড়ি যাওয়া, কেউ সমালোচনা করলে তা মাথা পেতে নেওয়ার পরামর্শও দেন তিনি। বাইরে থেকে লোক এনে শাসকদল ভোট লুঠ করতে পারে, এই আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি দাবি করেন, ‘‘বাড়িতে ডাকাত পড়লে যে ভাবে রুখে দাঁড়াতে হয়, সে ভাবেই হাতের কাছে যা আছে তা নিয়ে প্রতিরোধ করবেন। হানাদারদের ফিরে যেতে দেবেন না।’’
এ দিন বামফ্রন্টের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেন দলের জেলা আহ্বায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়। ৪৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩০টিতে সিপিএম এবং একটিতে ফরোয়ার্ড ব্লক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন তিনি। এ ছাড়া একটি ওয়ার্ডে সিপিআই এবং একটিতে নির্দল প্রার্থীর নাম পরে ঘোষণা করা হবে বলে জানান গৌরাঙ্গবাবু। ঘোষিত প্রার্থীদের মধ্যে ৩০ বছরের কম বয়সী ৫ জন। ৪০ বছরের মধ্যে আছেন ৮ জন, এবং ৪০-৫০ বছরের মধ্যে রয়েছেন ৭ জন। গৌরাঙ্গবাবুর অভিযোগ, ‘‘লোহা মাফিয়া, কয়লা মাফিয়াদের এনে শাসকদল মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে। কোনও কিছুকে পরোয়া না করে ভোট করে দেখিয়ে দিতে হবে আমাদের।’’
দুর্গাপুরের পুরভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা হবে কি না, সে নিয়ে বাম ও কংগ্রেস সমর্থকদের মধ্যে চর্চা চলছে বেশ কিছু দিন ধরেই। এ দিন সূর্যকান্তবাবু বলেন, ‘‘বিধানসভা ভোটে জোট হয়নি, আসন বোঝাপড়া হয়েছিল। এ বারও জোটের ব্যাপার নেই। আসন সমঝোতাও হবে না। তবে আমরা সব আসনে লড়ব এমন নয়। তৃণমূল-বিজেপিকে পরাস্ত করতে যদি কোথাও কারও ক্ষমতা বেশি বুঝি, সেখানে আমরা তার পাশেই থাকব।’’ কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দেবেশবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা শেষ হয়নি। তার মাঝেই এ ভাবে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল বামফ্রন্ট। এমন দাদাগিরি আমরা মানছি না। আলাদা ভাবে প্রতিদ্বন্দিতা করব।’’
যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দলের জেলা শিল্পাঞ্চল সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘কে কার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধল কি বাঁধল না, তা নিয়ে আমাদের কোনও আগ্রহ নেই। রাজ্যে পরপর ভোটে মানুষ তৃণমূলের উপরে ভরসা রেখেছেন। দুর্গাপুরেও তাই হবে।’’