দুর্গাপুর পুরসভায় বামেদের ওয়াক-আউট।
শহরের আনাচে-কানাচে জঞ্জাল। গরম ভাল করে পড়ার আগেই বেশ কয়েক দিন জলকষ্টে ভুগলেন শহরবাসী। অথচ, পুরসভায় এ সব অভিযোগ তুলতেই দেওয়া হয় না বলে দাবি দুর্গাপুেরর বাম কাউন্সিলরদের। প্রতিবাদে বুধবার কাউন্সিলরদের বৈঠক থেকে ‘ওয়াক-আউট’ করলেন তাঁরা। পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের শিবশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অগণতান্ত্রিক ভাবে বিরোধীদের মতামতকে কোনও গুরুত্ব না দিয়ে পুরসভা চালানো হচ্ছে। ন্যূনতম নাগরিক পরিষেবা পাচ্ছেন না মানুষ। অথচ সে কথা বলা যায় না।’’
বর্জ্য কোথায় ফেলা হবে তা নিয়ে পুরসভার মাথাব্যথার শেষ নেই দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে। শঙ্করপুরে আধুনিক কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র ২০১৩ সালের জুলাই থেকে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। তার পর থেকে বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা এখনও গড়ে তুলতে পারেনি পুরসভা। ফলে পুর এলাকার বহু জায়গাতেই জঞ্জাল জমে থাকছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এ দিকে গরম পড়তেই সমস্যা দেখা দেয় পুরসভার অঙ্গদপুর জল পরিশোধন কেন্দ্রের পাম্পে। টানা কয়েক দিন জল সরবরাহ অনিয়মিত ছিল। আগে পাইপলাইন দিয়ে যে সব জায়গায় জল পৌঁছত না সেখানে ট্যাঙ্কারে করে জল পাঠানো হতো। এ বার তেমন উদ্যোগ হয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
পুরসভার বিরোধী দলনেতা শিবশঙ্করবাবুর অভিযোগ, ‘‘ন্যূনতম নাগরিক পরিষেবার বালাই নেই। সব ওয়ার্ডের অবস্থাই খারাপ। তার মধ্যে বিরোধীদের ওয়ার্ডগুলির পরিস্থিতি আরও খারাপ। এই ওয়ার্ডগুলিতে কোনও কাজ হয় না।’’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, আগের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে নেওয়া সিদ্ধান্ত চুপিচুপি বদলে দেওয়া হয়। অথচ, বিরোধীদের তা জানতে দেওয়া হয় না। এ দিন কাউন্সিলরদের পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক ছিল। দুপুর ১টা নাগাদ বৈঠক শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা যায়, বাম কাউন্সিলরেরা বৈঠক ছেড়ে প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দিয়ে বেরিয়ে আসছেন।
পুরসভার ৪৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩০টি তৃণমূলের দখলে। বামেদের দখলে রয়েছে ১১টি ওয়ার্ড। এ ছাড়া কংগ্রেস ও বিজেপি-র দখলে রয়েছে একটি করে ওয়ার্ড। সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বাম কাউন্সিলররা প্রস্তুত হয়েই এসেছিলেন। শিবশঙ্করবাবু বলেন, ‘‘মানুষ আমাদের নির্বাচিত করেছেন। অথচ, পুরসভার কাজকর্মে আমাদের কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এ দিনও বৈঠকে অগণতান্ত্রিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে আমরা বৈঠক থেকে বেরিয়ে যাব বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছিলাম।’’
তৃণমূল নেতা তথা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, ‘‘এমন নাটক করে কোনও লাভ হবে না।’’ তাঁর দাবি, নিতান্তই রাজনীতি করার জন্য এমন কাণ্ড করেছেন বাম কাউন্সিলররা। ডেপুটি মেয়র বলেন, ‘‘যত দিন যাচ্ছে দুর্গাপুরের মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে সিপিএম। হালে পানি পাচ্ছেন না দলের নেতারা। নজর ঘোরাতে তাই এমন চটকদার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন বাম কাউন্সিলররা।’’