কালনায় বৈঠকে প্রশাসনের কর্তারা। নিজস্ব চিত্র
গত বছর কালনায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং ঘোষণা করেছিলেন কালনা ও নদিয়ার শান্তিপুরের সংযোগকারী সেতুটি তৈরি হবে ২০২২-এ। কিন্তু জমি-জটে ‘আটকে ছিল’ সেতুর কাজ। শেষমেশ কালনায় এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা বৈঠকের পরে জানালেন, তিনটি মৌজায় জমি দেওয়ার বিষয়ে জমি মালিকেরা মৌখিক সম্মতি জানিয়েছেন।
মহকুমা প্রশাসন জানায়, পূর্ব সাতগাছিয়া পঞ্চায়েতের হাঁসপুকুর, কুলিয়াদহ, পূর্ব সাহাপুর ও বারাসত মৌজায় প্রায় সাড়ে চারশো জনের কাছে সেতুর জন্য জমি কেনা হবে। কিন্তু বারবার বৈঠকেও বেশির ভাগ জমির মালিক জমি দিতে সম্মত হননি। তাঁদের মূল আপত্তি ছিল, জমির যে দর সরকার দিতে চাইছে, তা বাজারদরের থেকে কম।
বুধবার জমি-জট ছাড়াতে মহকুমাশাসকের (কালনা) কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী, জেলা সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, সহ-সভাধিপতি দেবু টুডু, মহকুমাশাসক নীতেশ ঢালি, কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু প্রমুখ। বৈঠকে যে সব চাষিরা এখনও জমি দিতে রাজি হননি তাঁদেরও ডাকা হয়। বেলা ১২টা থেকে দু’দফায় বৈঠক চলে।
কী ভাবে জট কাটল? প্রথম বৈঠকে ডাকা হয় পূর্ব সাহাপুর ও বারাসত মৌজার চাষিদের। সেখানে জেলাশাসক এক আধিকারিকের উদ্দেশে বলেন, ‘‘বেশি দেরি মানেই তো খরচ বাড়বে। তার থেকে যতটা সম্ভব ভাল দর জমির মালিকদের দিতে হবে’’— জেলাশাসকের এই মন্তব্যেই জমির দর বাড়িয়ে জট-কাটানোর ইঙ্গিত মিলতে শুরু করে, দাবি প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের।
প্রশাসনের কর্তারা জমির মালিকদের জানান, ‘শালি’ অথবা সোনা, ‘বাগান’ অথবা ‘ডাঙা’, ‘বাস্তু’ অথবা ‘ভিটে’ এবং ‘বাণিজ্যিক’ ভাবে ব্যবহৃত জমির জন্য আলাদা আলাদা দর ঠিক করা হয়েছে। এ সব চরিত্রের জমিগুলি আবার রাস্তার পাশে থাকলে বেশি দর, তা না থাকলে অপেক্ষাকৃত কম দর দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। বৈঠকে জানানো হয়, ‘সম্মতি’ দেওয়ার এক মাসের মধ্যে জমি দিলে, জমির মালিক সরকারি দরের উপরে ৫০ শতাংশ ‘ইনসেন্টিভ’ পাবেন। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসনিক আধিকারিকেরা জানান, জমির দরও সামগ্রিক ভাবে আগের থেকে বাড়ানো হয়েছে। যেমন, কুলিয়াদহ মৌজায় সাধারণ জমির দর আগে যেখানে শতক পিছু ছিল ৩৭ হাজার টাকা। এ দিন তা বাড়িয়ে করা হয় ৪৮ হাজার টাকা। এই অঙ্কেই হাঁসপুকুর ছাড়া, বাকি মৌজাগুলির জমি-জট কেটেছে বলে দাবি। সহ-সভাধিপতি দেবুবাবু বলেন, ‘‘সর্বসম্মতি ক্রমে তিন মৌজায় জমি নিয়ে জটিলতা কেটেছে।’’
কালনা ২ ব্লকের পূর্ব সাতগাছিয়া পঞ্চায়েতে আম-সহ নানা কিছুর বেশ কয়েকটি বাগান রয়েছে। বৈঠকে ‘ড্রোন’-এর মাধ্যমে তুলে আনা ছবি কোন মৌজায় কোন কোন ‘প্লট’ কেনা হচ্ছে তা জেলাশাসককে দেখান ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্তারা। জেলাশাসক দেখেন, বহু ‘প্লট’-এই রয়েছে নানা গাছ। জমিদাতাদের জেলাশাসক জানান, ওই সমস্ত জমিতে কিছুটা গুঁড়ি থাকা আমগাছের জন্য ৫,৪০০ টাকা ও কাটার জন্য আরও এক হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। সেগুনের মতো মূল্যবান গাছ থাকলে তার দাম ঠিক করবে বন দফতর। বৈঠকে অনেকেই জানান, সরকার কোনও ‘প্লট’-এ কিছুটা জমি নেওয়ার পরে, বেশ কিছু জমি পড়ে থাকছে কার্যত অকেজো হয়ে। জেলাশাসক জানান, যে সব ‘প্লট’-এ ৮০ শতাংশ জমি নেওয়া হচ্ছে, সেই সমস্ত ক্ষেত্রে বাকিটাও কিনে নেওয়া হবে। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে খুশি চাষিরাও। চারটি মৌজাতেই জমি থাকা জগন্নাথ ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা সরকারি দরে খুশি। জমি দিতে আমাদের আপত্তি নেই।’’
তবে প্রশাসন সূত্রে খবর, তিনটি মৌজার জমি-জট কেটে গেলেও এখনও কাঁটা হাঁসপুকুর মৌজা। কারণ, সেখানে বেশ কিছু ইটভাটা রয়েছে। জমির বাজারদরও অন্য তিন মৌজার থেকে সেখানে অনেকটাই বেশি বলে জানান সেখানের বাসিন্দারা। যদিও প্রশাসনের কর্তাদের আশা, এ ক্ষেত্রেও জট কেটে যাবে।