প্রতীকী ছবি।
দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে পাহাড় প্রমাণ কাজের চাপ। তার উপরে যোগ হয়েছে নতুন জেলার বাড়তি চাপ। অথচ বহু বছর ধরেই থমকে রয়েছে শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ। এমনকী আট মাস পার হওয়ার পরেও পূর্ণ সময়ের একজন জেলা পরিবহণ আধিকারিক নিয়োগ হননি। ফলে নামমাত্র কর্মী নিয়েই কার্যত হিমশিম খাচ্ছে আসানসোলের পরিবহণ দফতর। এই অবস্থায় প্রতিদিনই লঙ্ঘিত হচ্ছে পরিবহণ আইন। নিয়মের তোয়াক্কা না করে শহরের রাস্তায় ছুটছে যানবাহন। মার খাচ্ছে সরকারি রাজস্ব। যদিও জেলা প্রশাসনের দাবি, দ্রুত একজন জেলা পরিবহণ আধিকারিক দায়িত্বে আসবেন।
শুধু উচ্চ পদেই নয়। সংস্থার টেকনিক্যাল ও নন-টেকনিক্যাল পদেও কর্মীসংখ্যা কম। দফতর সূত্রের খবর, নবান্নের কাছে বারবার কর্মী চেয়েও সুরাহা হয়নি। আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই জোটেনি। দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে বেশ কিছু নতুন নির্দেশিকাও এসে গিয়েছে। কিন্তু শূন্যপদ পূরণের ক্ষেত্রে এখনও কোনও সরকারি উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিবছর অন্তত ৫০ হাজার আবেদনকারীদের টেস্ট ড্রাইভ নিয়ে লাইসেন্স বিতরণ করা হয়। কম বেশি ২০ হাজার নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করা হয়। কয়েক হাজার যাত্রীবাহী ও ব্যক্তিগত যানবাহণের ফিটনেস দেখে শংসাপত্র দিতে হয়। বাড়তি কাজ হিসেবে আবার যোগ হয়েছে অটো ও টোটোর রুট বিতরণ ও রেজিস্ট্রেশন করার ঝক্কি। দফতরের ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, আসানসোলে দু’জন সহকারি পরিবহণ আধিকারিকের পদ রয়েছে। কিন্তু কাজ চালাচ্ছেন একজনই। পাঁচজন নন-টেকনিক্যাল কর্মীর পদ থাকলেও কাজ চালাচ্ছেন মাত্র দু’জন। টেকনিক্যাল পদের জন্য তিনজন কর্মী বরাদ্দ থাকলেও এতবড় এলাকার কাজ সামাল দিতে আরও কর্মী দরকার। এখানেই শেষ নয়। লোয়ার ডিভিশন (এলডিসি) ও আপার ডিভিশন ক্লার্ক (ইউডিসি) এর সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম রয়েছে। ফলে ফাইলের পাহাড় জমে থাকছে।
কর্মিহীন নিধিরাম আসানসোল পরিবহণ দফতরের এই অবস্থা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে মহকুমা পরিবহণ আধিকারিক মানস হালদার বলেন, ‘‘সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’ তাঁর দাবি, প্রয়োজনের তুনলনায় অনেক কম সংখ্যক কর্মী নিয়েও চলতি আর্থিক বছরে প্রায় ৬৮ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। কর্মী বাড়লে সরকারের ঘরে রাজস্বও বাড়বে।
এ প্রসঙ্গে আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) প্রলয় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘খুব দ্রুত কাজের দায়িত্ব নেবেন জেলা পরিবহণ আধিকারিক।’’
প্রশ্ন উঠেছে, কর্মীর অভাবে সাধারণ মানুষের কী ক্ষতি হচ্ছে তা নিয়ে? দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, চাপ কমাতে তাড়াহুড়ো করে ব্যক্তিগত বা যাত্রীবাহী যানের ফিটনেস শংসাপত্র দিতে হয়। ফলে কাজে গলদ থেকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সঠিক ভাবে পরিবহণ আইন মেনে রাস্তায় গাড়ি চলছে কি না তার নজরদারিতেও গলদ থেকে যেতে পারে। অত্যধিক চাপের ফলে খুব কম সময়ে টেস্ট ড্রাইভ শেষ করে আবেদনকারীদের লাইসেন্স দেওয়া হয়। ফলে যাঁরা পাশ করছেন তাঁদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। তবে দফতরের কর্তারা মনে করেন, নতুন জেলা আধিকারিক নিয়োগ হলে কিছুটা হলেও সমস্যা মিটবে