দুর্গাপুর ব্যারাজে স্কাডা কন্ট্রোল রুম। —নিজস্ব চিত্র।
স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির সৌজন্যে তথ্য আছে। কিন্তু তথ্যানুযায়ী পদক্ষেপ করার জন্য সর্বক্ষণের লোক নেই। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরখানেক আগে দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে জল ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করতে আধুনিক স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি, ‘সুপারভাইজ়রি কন্ট্রোল অ্যান্ড ডাটা অ্যাকুইজিশন’ (স্কাডা) পদ্ধতি চালু হয়েছে। সেখানেই এই অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে, প্রযুক্তিটি পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
১৯৫৫-য় তৈরি, ৬৯২ মিটার দীর্ঘ দুর্গাপুর ব্যারাজের গেটের সংখ্যা ৩৪টি। মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে জল ছাড়লে দুর্গাপুর ব্যারাজের জলের পরিমাণ স্বাভাবিক (২১১.৫০ ফুট) রাখতে জল ছাড়তে হয়। ডিভিসি-র ছাড়া জলে বন্যা কি না, তা নিয়ে অতীতে কেন্দ্র-রাজ্য তরজার বহু নজির রয়েছে। ২০১৭ ও ২০২০ সালে গেট বেঁকে দুর্গাপুর ব্যারাজ জলশূন্য হওয়ার ঘটনায় অন্তর্ঘাতের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু স্কাডা প্রযুক্তি চালুর পরে পুরো বিষয়টি সর্বক্ষণের নজরদারিতে চলে এসেছে।
এই প্রযুক্তিতে ডিভিসি উচ্চ অববাহিকায় ৬০-৮০ কিলোমিটার দূরের মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে কত পরিমাণ জল ছাড়া হল, কতক্ষণ পরে সেই জল দুর্গাপুর ব্যারাজে এসে পৌঁছবে, দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে আসানসোল পর্যন্ত কত জল রয়েছে, সব তথ্য প্রতিনিয়ত সংগ্রহ করা হয়। মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে কত জল ছাড়া হল ডিভিসি তা জানায়। কিন্তু মাঝ রাস্তায় প্রবল বৃষ্টির জন্য বা উপনদী দিয়ে বয়ে আসা কত জল যোগ হল, সেটা ঠিক ভাবে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয় না। স্কাডা প্রযুক্তিতে সেন্সরের মাধ্যমে সেই তথ্যও চলে আসে ব্যারাজের ‘স্কাডা কন্ট্রোল রুমে’। সেই সব তথ্য বিশ্লেষণ করে কম্পিউটারইজ়ড মনিটরিং ব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে কত জল ছাড়া হবে তা নির্দিষ্ট করে দেয় ওই প্রযুক্তি। ব্যারাজের প্রতিটি গেটে বসানো আছে সেন্সর। তাই, জল ছাড়তে গেট কতটা তুলতে হবে, সেটাও ঠিক করে দেয় এই প্রযুক্তি। একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের সেচ দফতরের আধিকারিকেরা কলকাতায় বসেই তা দেখতে পাবেন। একই ভাবে সেই ওয়েবসাইট থেকেই যাবতীয় তথ্য পাবে কেন্দ্র। ফলে, বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলে দ্রুত প্রস্তুতি নেওয়া
সম্ভব হবে।
কিন্তু, সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্য জায়গায়। দুর্গাপুর ব্যারাজে স্কাডা প্রযুক্তি চালু করার প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৯-এ। ব্যারাজের পাশে ভবন নির্মাণ করা হয়। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়। এর পরে ২০২২-এর মাঝামাঝি চালু হয় নতুন এই প্রযুক্তি। সেচ দফতরের তরফে প্রাথমিক ভাবে পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থাকে। সেই সংস্থাই ব্যারাজের সেচ দফতরের কর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করবে। সূত্রের খবর, সেচ দফতরের সংশ্লিষ্ট বিভাগে কর্মীর অভাব থাকায় প্রশিক্ষণের বিষয়টি তেমন এগোয়নি। জানা গিয়েছে, আপাতত বেসরকারি সংস্থার তরফে এক জন কর্মী পুরো বিষয়টি পরিচালনা করছেন!
তাতে কী সমস্যা হচ্ছে? মোবাইলে নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে প্রযুক্তির সূত্রে ২৪ ঘণ্টা জল-তথ্য পাওয়া যায় ঠিকই। কিন্তু সেই তথ্যানুযায়ী কাজ করা যেমন, স্বয়ংক্রিয় ভাবে গেট তোলার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের নির্দেশ (‘কমান্ড’) দেওয়ার লোক থাকে না। ফলে, প্রযুক্তি থেকেও পুরোপুরি লাভ হচ্ছে না। সেই কাজটি করতে হচ্ছে মানুষ দিয়েই।
যদিও, সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগে কর্মী এসেছেন। এ বার ওই সংস্থা তাঁদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। সেচ দফতরের দামোদর হেড ওয়ার্কস ডিভিশনের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় মজুমদার বলেন, “সেচ দফতরের সংশ্লিষ্ট বিভাগে কর্মী কম থাকায় একটা সমস্যা ছিল। এ বার সেটা মেটার পথে। আশা করা যায়, দ্রুত সমস্যার সুরাহা হবে।”