সন্ধ্যায় কাটোয়া শহরের একটি রাস্তা। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়
‘কণ্টকনগর’ নাম কাটোয়া হয়েছে বহু দিন। কিন্তু পরিকাঠামোর ‘কাঁটা’ দূর হয়নি।
পুরসভার গোড়াপত্তনের সময় থেকে বেশির ভাগ রাস্তায় পথবাতি হিসাবে লাগানো ছিল হলুদ বাল্ব। পরে তা বদলে যায় টিউবে। গত কুড়ি বছর ধরে সেই টিউবই পথবাতি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শহরবাসীর ক্ষোভ, এতে আঁধারও পুরোপুরি কাটে না, আবার শহরের শোভাও বাড়ে না। যদিও পুরসভার আশ্বাস, শহরকে আধুনিক বাতিস্তম্ভে সাজিয়ে তোলার জন্য ইতিমধ্যেই টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
সার্কাস ময়দান, স্টেশন রোড, মাস্টারপাড়া, টেলিফোন ময়দান, পানুহাট, মাধাইতলা, লেনিন সরণির মতো বহু এলাকায় ল্যাম্পপোস্টে টিউবলাইট লাগানো রয়েছে। আবার পাবনা কলোনি, ফরিদপুর কলোনি, ভন্ডুলের মাঠের মতো যে সব জায়গায় ক্রমাগত বসতি গড়ে উঠছে সেখানে আলো অপ্রতুল বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ওই এলাকার বাসিন্দা মনোজ সরকার, দীপক হাওলাদার, শৈলেন মাঝিদের দাবি, শহরের অন্য অংশের তুলনায় এই এলাকায় জমির দাম একটু কম। তাই বাড়িঘর বাড়ছে। কিন্তু বসতি বাড়লেও পথবাতি বাড়ানোর নাম নেই পুরসভার। তাঁরা বলেন, ‘‘টিউবে পর্যাপ্ত আলো হয় না। অন্য শহরের মতো এলইডি আলো লাগালে উজ্জ্বলতা বাড়বে। যে দল ভোট চাইতে আসবে, তাকেই এ কথা বলব।’’
স্টেশনবাজার ও কাছারি রোড শহরের অন্যতম জরুরি রাস্তা। বড় বড় দোকান, শপিংমল রয়েছে রাস্তার দু’ধারে। বাসিন্দাদের দাবি, সন্ধ্যায় দোকান ও শপিংমলগুলির আলোয় রাস্তা ঝলমল করলেও রাত ১০টার পরে দোকানে ঝাঁপ পড়লেই ম্রিয়মান হয়ে পড়ে রাস্তা। এলাকাবাসীর ক্ষোভ, অন্য শহর ত্রিফলা বাতিতে সেজেছে। তাঁরা আছেন পুরনো আমলেই।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৫ সালে কংগ্রেস পুরবোর্ড দখলের পরে পথবাতি বাড়ানো হয়। বাল্ব সরিয়ে বসানো হয় টিউবলাইট। ২০০০ সালের পুরভোটে কংগ্রেসের স্লোগানও ছিল ‘ঝকঝকে আলো’। কিন্তু এখন এলইডি-র যুগে সেই আলোও ফিকে, দাবি বিরোধীদের। কাটোয়ার সিপিএম নেতা অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের শহরে পথবাতির আধুনিকীকরণ হয়নি। পথবাতি নেই বহু এলাকায়। পুরসভা ভোটে মানুষ জবাব দেবেন।’’
বিজেপির জেলা সভাপতি (কাটোয়া) কৃষ্ণ ঘোষেরও অভিযোগ, ‘‘শহরের পিছিয়ে থাকা পাড়াগুলিতে পথবাতি খুবই কম। প্রধান রাস্তাগুলিতে বেমানান টিউব। তৃণমূল আসলে উন্নয়নের নামে শুধুই ভাঁওতা দিয়ে গিয়েছে। ভোটের প্রচারে এ নিয়ে আমরা জনমত গড়ে তুলব।’’
যদিও কাটোয়ার পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিরোধীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। অনেক আগেই শহরের নানা প্রান্তে হাইমাস্ট আলো বসানো হয়েছে। এলইডি বাল্ব দেওয়া হয়েছে। শহর আগের থেকে অনেক ঝলমলে।’’ তাঁর আরও দাবি, শীঘ্রই ৩৫০টি আধুনিক মানের এলইডি বাতিস্তম্ভে সাজানো হবে শহর। দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষ করে এক ঠিকাদার সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কাছেও আবেদন করা হয়েছে।