বন্ধ দোকানপাট। বুধবার। ছবি: উদিত সিংহ ও জাভেদ আরফিন মণ্ডল
বাজারহাট খোলা ছিল। যাত্রী পরিবহণ, সরকারি ও বেসরকারি অফিসে কর্মীদের উপস্থিতিতেও তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি। বুধবার বিজেপি-র ডাকা বন্ধের জেরে জনজীবন স্বাভাবিক ছিল বলেই দাবি করেছে পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন এবং তৃণমূল নেতৃত্ব। বিজেপি-র যদিও দাবি, মানুষ বন্ধে সাড়া দিয়েছেন।
সকাল থেকে দুর্গাপুরের বি-জোন, বেনাচিতি প্রভৃতি রুটের অধিকাংশ মিনিবাসই রাস্তায় নামে বলে জানা গিয়েছে। তবে যাত্রী তেমন ছিল না। ফলে বেলা বেড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিনিবাসের সংখ্যাও কমে যায়। মিনিবাস মালিকদের অন্যতম সংগঠনের তরফে অলোক চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘প্রায় ৮০ শতাংশ মিনিবাস চলেছে।’’
তবে দুর্গাপুর থেকে দূরপাল্লার বড় বাস প্রায় চলেনি বলেই জানা গিয়েছে। সকালের দিকে বাঁকুড়া থেকে তিন-চারটি বাস দুর্গাপুরে ঢুকলেও আসানসোল, বরাকর, বর্ধমান, বোলপুর, বহরমপুর প্রভৃতি রুটের কোনও বাস আসা-যাওয়া করেনি বলে জানিয়েছেন আইএনটিইউসি প্রভাবিত বাসকর্মী সংগঠনের নেতা স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘বন্ধ এখন দু’পক্ষের রেষারেষির পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পরিবহণ কর্মীরা বিপদে পড়লে তার দায় কে নেবে। তাই ঝুঁকি না নিয়ে বাস চলেনি সে ভাবে।’’
তবে এ দিন দুর্গাপুর ও আসানসোলে সরকারি বাস পরিষেবা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু যাত্রীর অভাব চোখে পড়েছে বলে জানান পরিবহণ কর্মীরা। অটো ও টোটো চলাচলও প্রায় স্বাভাবিক ছিল আসানসোল ও দুর্গাপুরে। বন্ধের তেমন প্রভাব পড়েনি রানিগঞ্জ, জামুড়িয়াতেও। তবে রাস্তায় লোক জনের সংখ্যা অন্য দিনের তুলনায় কম ছিল।
এই পরিস্থিতিতে সমস্যায় পড়েন অনেকেই। দুর্গাপুর স্টেশন লাগোয়া বাসস্ট্যান্ডে সপরিবার দাঁড়িয়ে ছিলেন সুমন বসু। তিনি বলেন, ‘‘পুরুলিয়া যাব। কিন্তু বাস নেই। কী ভাবে গন্তব্যে পৌঁছব জানি না।’’ সকালে সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ডে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে শেষমেশ মিনিবাসে দুর্গাপুর স্টেশনের দিকে রওনা দেন বরাকরের বাসিন্দা সৌনক পাত্র। তাঁর কথায়, ‘‘বাসে যাতায়াত করা সুবিধার। কিন্তু বাস চলছে না। স্টেশনে গিয়ে ট্রেন ধরে ফিরতে হবে।’’
আসানসোল বাজার আংশিক বন্ধ ছিল। বরাকর বাজার সকাল থেকে বন্ধ থাকলেও ১২টার পরে দু’-একটি করে দোকান খুলতে শুরু করে। বেনাচিতি বাজারের মতো শিল্পাঞ্চলের বড় বাজারগুলিতে অধিকাংশ দোকানপাট খোলা ছিল বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। জেলা স্কুল পরিদর্শক অজয় পাল জানান, জেলার সব ক’টি স্কুল খোলা ছিল। দুর্গাপুরে পড়ুয়াদের উপস্থিতি স্বাভাবিক হলেও আসানসোলের নানা স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা কম ছিল বলে জানা গিয়েছে।
পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠি বলেন, ‘‘জেলার সবকটি সরকারি দফতরেই স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। কোনও জায়গা থেকে বন্ধের জেরে কাজে ক্ষতির রিপোর্ট মেলেনি।’’ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা, ইসিএলের নানা খনি, বেসরকারি সংস্থাতেও কর্মী উপস্থিতির হার স্বাভাবিক ছিল বলে জানা গিয়েছে। দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট, বার্নপুর ইস্কো কারখানাতেও ফি দিনের মতো নির্দিষ্ট সময়েই সাইকেল, মোটরবাইকে চ়ড়ে কর্মীদের কাজে যোগ দিয়ে দেখা গিয়েছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘বন্ধ একেবারেই ব্যর্থ। মানুষ পথে নেমে তা প্রমাণ করে দিয়েছেন।’’ বিজেপি-র রাজ্য নেতা পবন সিংহ যদিও দাবি করেন, ‘‘মানুষের সাড়া মিলেছে। বন্ধ স্বতঃস্ফূর্ত।’’