—প্রতীকী চিত্র
শহরে একের পর এক কেপমারির অভিযোগে চিন্তায় পড়েছিল পুলিশ। বিশেষ তদন্তকারী দলও গড়া হয়। একাধিক ‘সিসিটিভি ফুটেজ’ খতিয়ে দেখে একটি এসইউভির খোঁজ মেলে। সেই সূত্র ধরে বর্ধমান থানার পুলিশ পৌঁছে যায় মধ্যপ্রদেশের বুরহানপুরে। পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওখান থেকে মহসিন খান ওরফে বাকো ও রজনীকান্ত জসওয়ালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আন্তঃরাজ্য চক্র বলে মনে হচ্ছে। সম্ভবত, স্থানীয় দুষ্কৃতীদেরও যোগ আছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।’’ সাত দিন ‘ট্রানজিট রিমান্ডের’ পরে মঙ্গলবার ধৃতদের বর্ধমান আদালতে তোলা হলে ১৪ দিন পুলিশ হেফাজত হয়।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ ডিসেম্বর মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রামের এক ব্যবসায়ী বর্ধমান শহরের সোনাপট্টিতে এসেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, পুলিশ পরিচয় দিয়ে দু’জন এসে চোরাই গয়না পাচার করা হচ্ছে কি না জানতে চান। উত্তর দেওয়ার আগেই তাঁকে জানানো হয়, ‘ওই দেখুন সাহেব ডাকছেন। ওখানে চলুন’। সেখানে গেলে গয়নার ব্যাগটি দেখতে চাওয়া হয়। মিনিট খানেকের মধ্যে ব্যাগটি ফেরতও পান তিনি। ব্যাগ খুলে সব ঠিক আছে কি না দেখার ফাঁকেই মোটরবাইকে পগারপার ওই ‘পুলিশ’। ওই ব্যবসায়ীর দাবি, একশো গ্রামেরও বেশি সোনা খোয়া গিয়েছে তাঁর।
এর আগে প্রতারণার অভিযোগ করেন ইরা কোনার নামে এক মহিলাও। অভিযোগ, ১৯ সেপ্টেম্বর জিটি রোড ও পার্কাস রোডের মুখে একটি জায়গায় তাঁর পথ আটকায় কয়েকজন। হিন্দিতে জানানো হয়, তাঁরা সরকারের বড় অফিসার। ‘কার্ড’ও দেখায় নিজেদের। সঙ্গে জানায়, নানা জায়গায় তল্লাশি চলছে, গায়ের গয়না খুলে রাখা উচিত। সেই মতো একটি ব্যাগে গয়না খুলে রাখেন ওই মহিলা। কিছুক্ষণ পরে বুঝতে পারেন, ব্যাগ পড়ে থাকলেও গয়নার সঙ্গে ‘সরকারি অফিসারেরা’ও উধাও। কয়েকদিন পরে, ২৩ ডিসেম্বর বাদামতলায় চালের গদি থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে বেরনোর সময়ে একই ভাবে ‘সিবিআই অফিসার’-এর সাক্ষৎ পান এক ব্যবসায়ী। অভিযোগ, জাল নোট কি না দেখার ছুতোয় তাঁর টাকার ব্যাগ নিয়ে পালায় প্রতারকেরা।
পুলিশের দাবি, তদন্তে নেমে প্রথমেই সমস্ত ‘সিসিটিভি ফুটেজ’ খুঁটিয়ে দেখা হয়। যে সব রাস্তা দিয়ে ‘কেপমারেরা’ পালাচ্ছিল, সেখানকার ‘ফুটেজ’ও সংগ্রহ করা হয়। তাতে দেখা যায়, ঘটনাস্থল থেকে দূরে রাখা একটি এসইউভিতে মোটরবাইকে করে এসে দু’জন উঠে পড়ছে। পরে আরও একটি বাইকে আসছে আরও দু’জন। গাড়ি দু’টিকে বারবার পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জ ও মেদিনীপুরের খড়্গপুরের রাস্তায় দেখা যায়, দাবি পুলিশের। মোটরবাইক দু’টি ও গাড়িটির নম্বর মধ্যপ্রদেশের বলেও জানতে পারে পুলিশ। সেই সূত্র ধরে রজনীকান্তের কাছে পৌঁছয় পুলিশ। পরে ধরা হয় মহসিনকে।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতেরা প্রথমে মোটরবাইকে মধ্যপ্রদেশ থেকে বর্ধমানে আসে। সেখানে কোনও স্ট্যান্ডে বাইক দু’টি রেখে ফিরে যায়। পরে গাড়ি নিয়ে এসে রানিগঞ্জের যাদবপাড়ের একটি হোটেলে কয়েক দিন থেকে কখনও পুলিশ, কখনও সিবিআইয়ের জাল পরিচয় দিয়ে প্রতারণা, লুটপাট করে। পুলিশ সুপার বলেন, “বর্ধমান শহরে আরও দু’টি কেপমারির ঘটনা হয়েছে। তাদের সঙ্গে এই চক্রের কোনও যোগ রয়েছে কি না দেখতে হবে।’’