তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ।
করোনা-পরিস্থিতিতে এ বার সরস্বতী পুজো কতটা করা যাবে, সে নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। ক্লাব-কর্তাদের নিয়ে মাসখানেক আগে বৈঠক করে প্রশাসনের আধিকারিকেরা জানান, শোভাযাত্রা বাদ দিয়ে স্বাস্থ্য-বিধি মেনে পুজো করা যাবে। প্রস্তুতির জন্য অল্প সময় পেলেও নানা থিমের প্রতিমা ও মণ্ডপ গড়ছেন বলে জানাচ্ছেন কালনা শহর ও লাগোয়া এলাকার বিভিন্ন ক্লাবের কর্তারা। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি ‘থিম’ আবার করোনাকে ঘিরেই।
কালনায় বছরের অন্যতম বড় উৎসব সরস্বতী পুজো। তিন দিনের উৎসব শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার থেকে। বিভিন্ন পুজোর উদ্যোক্তারা জানান, করোনা অতিমারির জেরে অন্য বছরের তুলনায় জৌলুস এ বার কিছুটা কম। বাজেট কমিয়ে পুজো করছেন অনেকেই। তার মধ্যেই নানা ক্লাব বিভিন্ন ‘থিম’ তুলে ধরায় উদ্যোগী হয়েছে।
কালনার রামেশ্বরপুর মডার্ন ক্লাবের থিম এ বার ‘বিবর্ণ’। শিল্পী দেবব্রত রায় জানান, করোনা-পরিস্থিতি বিশ্বের মানুষের উপরে যে ভাবে প্রভাব ফেলেছে, তা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা চলছে। কী ভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, তা-ও তুলে ধরা হচ্ছে মণ্ডপে। নাইলনের নেট, কাঠ, বাঁশ, কাপড়-সহ নানা সামগ্রী দিয়ে সেজে উঠছে মণ্ডপটি।
কালনা শহরের চারাবাগান সবুজ সমিতির থিম ‘বিশ্ব মহামারি’। গত একশো বছরে বিশ্বে প্লেগ, সোয়াইন ফ্লু থেকে করোনার মতো কোন-কোন মহামারি হয়েছে, ছবির মাধ্যমে তা তুলে ধরা হচ্ছে মণ্ডপে। প্লাস্টার অব প্যারিস, রং, তুষ, কাঠ-সহ উপকরণে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপটি। বড়মিত্রপাড়ার বিধান স্মৃতি সঙ্ঘের মণ্ডপের থিম ‘আলো’। উদ্যোক্তারা জানান, ফোম দিয়ে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী প্রদীপ পাল প্রতিমা তৈরি করছেন। বারুইপাড়া দক্ষিণ এ বার তারকেশ্বরের মন্দিরকে থিম করছে। এর আগে নানা বছরে কেদারনাথ ধাম, তারাপীঠের মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছিল। শ্যামগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের মণ্ডপে আবার তারাপীঠের মহাশ্মশান তুলে ধরা হচ্ছে বলে জানান উদ্যোক্তারা। তাঁদের দাবি, শ্মশানের নানা দৃশ্য ও জ্যান্ত মডেল রাখা হচ্ছে।
শহরের জুবলি স্টার ক্লাবের কর্তারা জানান, ৭০ ফুট উঁচু ও ৬০ ফুট চওড়া মণ্ডপ তৈরি করছেন তাঁরা। কাজ করছেন ২২ জন কর্মী। নবদ্বীপের শিল্পী বাবু সাহার তত্ত্বাবধানে এই মণ্ডপ সাজছে প্রায় পাঁচ লক্ষ কাঠের চামচ দিয়ে। ক্লাবের এক কর্তা অমিত নন্দী বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য-বিধি মেনেই পুজোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মণ্ডপেও সচেতনেতামূলক প্রচার চালানো হবে।’’
শহরের শিল্পী অরিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রতি বার নানা রকম উপকরণ দিয়ে প্রতিমা গড়েন। মাসখানেকের চেষ্টায় এ বার তিনি তৈরি করেছেন ৭ ফুটের কাঠের চামচের প্রতিমা। শিল্পীর দাবি, ‘‘প্লাস্টিকের চামচের ব্যবহার বাড়ায় দূষণ বাড়ছে। কাঠের চামচ দূষণমুক্ত। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতেই এই ভাবনা।’’ তিনি জানান, প্রতিমাটি কাটোয়ার মুস্থুলির একটি ক্লাবের পুজোয় পাঠানো হবে।