ভাতারে মিছিলে এক সঙ্গে ‘দাদা-ভাই’

বিরোধীদের টিপ্পনী, বহিরাগত বিধায়ককে ‘কোণঠাসা’ করতেই প্রায় আট বছর পরে এক হয়েছেন ভাতারের তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক, জেলা রাজনীতিতে প্রবীণ বনমালী হাজরা ও ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ মানগোবিন্দ অধিকারী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ভাতার শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৩৩
Share:

পাশাপাশি বনমালী হাজরা ও মানগোবিন্দ অধিকারী। নিজস্ব চিত্র

বিধানসভা ভোটে ভূমিপুত্রকে প্রার্থী করার দাবিতে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছিলেন ভাতারের কিছু যুবক। তার কয়েকদিনের মধ্যেই, শনিবার সকালে এক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পাশাপাশি দেখা গেল ‘দাদা-ভাই’কে। বিরোধীদের টিপ্পনী, বহিরাগত বিধায়ককে ‘কোণঠাসা’ করতেই প্রায় আট বছর পরে এক হয়েছেন ভাতারের তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক, জেলা রাজনীতিতে প্রবীণ বনমালী হাজরা ও ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ মানগোবিন্দ অধিকারী। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, একজোট হতে দেখে ভয় পেয়েই এ সব বলছেন বিরোধীরা।

Advertisement

২০১৬-র বিধানসভা ভোটে টিকিট পাননি বনমালীবাবু। ফাঁক গলে পাশের আউশগ্রাম বিধানসভার বাসিন্দা, জেলা যুব সভাপতি সুভাষ মণ্ডল ভোটে লড়েন। জিতেও যান। তৃণমূলের একাংশের দাবি, ‘ভাই’য়ের প্রকাশ্য বিরোধিতার জেরেই টিকিট পাননি প্রবীণ নেতা। আবার মানগোবিন্দবাবুর অনুগামীদের ক্ষোভ, বিধায়ক হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই তাঁকে কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তার প্রভাব পড়ে। পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ থেকে সরিয়ে মানগোবিন্দবাবুকে ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির ভূমি দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিভিন্ন বিষয়ে দূরত্ব বাড়ে ভাতারের পর্যবেক্ষক বনমালীবাবুর সঙ্গেও।

তবে দূরত্বের গোড়াপত্তনটা আরও আগে। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের পর থেকে দুই নেতার মুখ দেখাদেখি কার্যত বন্ধ ছিল। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের পরে প্রকাশ্যেও বিরোধিতা দেখা যায়। বারবার মিছিল, বৈঠক করে বনমালীবাবুকে যাতে ফের টিকিট না দেওয়া হয়, সেই বার্তা দেন মানগোবিন্দ। দলের রাজ্য নেতৃত্ব দুই নেতাকে নিয়ে বারবার বৈঠক, কর্মসূচি করে। কিন্তু দ্বন্দ্ব থামেনি। ২০১৬-য় প্রার্থীর নাম ঘোষণা হতেই বনমালীবাবুর ঘনিষ্ঠরা তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনে বিক্ষোভ দেখান। আবার ভাতারের মানুষের দাবি মানার জন্য মানগোবিন্দবাবুর ঘনিষ্ঠরা ‘দিদি’কে ধন্যবাদ জানান। তবে ভোটের চার বছর পার হলেও দু’জনের সম্পর্কের ফাটল বোজেনি।

Advertisement

এ দিন জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) ও নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরোধিতায় হুডখোলা গাড়িতে দু’জনকে পাশাপাশি দেখে প্রশ্ন জাগে অনেকেরই। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ হাজার খানেক বাইক নিয়ে এরুয়ার থেকে মিছিল শুরু হয়। বলগোনা, আলিনগর, ভাতার হয়ে তিরিশ কিলোমিটার ঘরে এরুয়ারেই মিছিল শেষ হয়। মানগোবিন্দবাবুর ঘনিষ্ঠ এক জন বলেন, “গত বিধানসভার সময়ে বনমালীদা কথা দিয়েছিলেন, মানগোবিন্দদাকে ব্লক সভাপতি করবেন। কথা রাখেননি বলেই দূরত্ব তৈরি হয়। এখন ভূমিপুত্রের দাবি ওঠার পরে বনমালীদা বুঝতে পেরেছেন, ভাতারে দল ঠিক রাখতে গেলে মানগোবিন্দদাকে দরকার।’’ বনমালীবাবু বলেন, “দলকে ধরে রাখতে গেলে ভাতারের দায়িত্ব মানগোবিন্দকেই দিতে হবে। সে কথা দলকে বলে দিয়েছি।’’ আর মানগোবিন্দবাবুর কথায়, ‘‘দাদা ছাড়া ভাতারের রাজনীতি হয় না কি! সে জন্যই তো একসঙ্গে মিছিল করলাম।’’

বিধায়ক সুভাষ মণ্ডল অবশ্য এই কর্মসূচি নিয়ে কোনও কথা বলেননি। এ দিন বিকেলে স্বর্ণচালিদা গ্রামে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে বিধায়ক ও বনমালীবাবু একসঙ্গে ছিলেন।

তবে বিবদমান দুই নেতার ‘মিলনে’ কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা। স্থানীয় বিজেপি নেতা প্রবাল রায় বলেন, “এলাকার মানুষের দাবি মানলে বনমালীবাবুই ফের প্রার্থী হতে পারেন। সেই স্বপ্নেই ভাইয়ের হাত ধরেছেন উনি।’’ সিপিএম নেতা নজরুল হকেরও দাবি, “বিধায়ককে কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া শুরু হল তৃণমূলের ভিতরে।’’ যদিও ওই দুই নেতা কথায়, “বিধানসভা ভোটের আগে সবাই এক হচ্ছি, বুঝতে পেরেই বাজে বকছেন বিরোধী নেতারা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement