ফের বাজি বিক্রি শুরু। বর্ধমান শহরের তেঁতুলতলা বাজারে। নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পরে, বর্ধমান শহরের ‘বাজি-বাজার’ তেঁতুলতলায় বিক্রেতাদের ঝাঁপ এক রকম বন্ধই ছিল। সোমবার রাতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে, মঙ্গলবার সকাল থেকে ফের বাজির পসরা নিয়ে রাস্তায় বসে পড়েছেন বিক্রেতারা। ‘সবুজ বাজি’ লোগো দেওয়া কিছু বাজি রয়েছে সেখানে। রয়েছে আতশবাজিও। কাটোয়া ও কালনা মহকুমার বেশির ভাগ জায়গায় অবশ্য প্রকাশ্যে বাজি বিক্রি করতে দেখা যায়নি।
সুপ্রিম কোর্ট ‘গ্রিন ক্র্যাকার’ বা সবুজ বাজির পক্ষে রায় দিয়েছে। বর্ধমানের তেঁতুলতলা বাজারে সবুজ বাজির ‘লোগো’ দেওয়া প্যাকেটের সঙ্গেই দেখা যাচ্ছে রকমারি রংমশাল, তুবড়ি, চরকি, রকেট। একাধিক বাজি বিক্রেতার দাবি, ‘‘আদালত তো পরিবেশবান্ধব বাজি বিক্রি করতে বলেছে। শব্দ ও ধোঁয়া কম বাজিই তো পরিবেশবান্ধব। সেগুলিই বিক্রি করছি।’’ তাঁদের আরও দাবি, দক্ষিণ ভারতের একটি সংস্থা ‘লোগো’, ‘কিউআরকোড’ দেওয়া দেওয়া সবুজ বাজি তৈরি করে। বিক্রির জন্য সে সবও আনা হয়েছিল। কিন্তু খরিদ্দার কোথায়! বাজি কিনতে আসা সত্যেন দাস, মধুসূদন ধরদের কথায়, ‘‘সবুজ বাজি খায় না মাথায় দেয় ,জানা নেই। তার চেয়ে সাধারণ বাজি কেনাই ভাল। যা কিনি, তাই কিনেছি।’’
এ দিন কাটোয়া শহরের স্টেশনবাজার, নিচুবাজার, বড়বাজার, কাছারি রোডের কোথাও প্রকাশ্যে বাজি বিক্রি হতে দেখা যায়নি। পুলিশের তরফে বাজি কেনা নিয়ে ফ্লেক্স টাঙিয়ে প্রচারও করা হয়। শহরের এক বাজি বিক্রেতার দাবি, ‘‘পরিবেশবান্ধব বাজি নিয়ে সকলের মনে প্রশ্ন রয়েছে। তার উপরে পুলিশের ঝামেলা। সে জন্য বাজি বিক্রি করতে পারলাম না। লোকসান হল।’’ ক্রেতারাও সবুজ বাজি কোনটা, সে ধন্দে কমিয়েছেন বাজি কেনা। সার্কাস ময়দানের বাসিন্দা সজল দত্ত বলেন, ‘‘যে কোনও বাজি পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকারক। সচেতন
হওয়াই ভাল।’’
কালনা শহরেও প্রকাশ্যে বাজি বিক্রি দেখা যায়নি। তবে কিছু ব্যবসায়ী গোপনে পরিচিতদের বাজি বিক্রি করছেন বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয় কমলিকা মল্লিকের দাবি, ‘‘অনেকেই বাজি ফাটাচ্ছেন। বিক্রি না হলে, পাচ্ছেন কী ভাবে?’’ জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক দিনে বর্ধমান শহর থেকেই ৮৩ কেজি বাজি উদ্ধার হয়েছে। মেমারি, গলসি-সহ বিভিন্ন থানাও বাজি উদ্ধার করেছে। বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। মঙ্গলবার গলসির রামগোপালপুর বাজার থেকেও পাঁচ কেজি বাজি-সহ এক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘হাইকোর্টের রায়ের পরে, সব বাজি বিক্রি বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু শীর্ষ আদালতের রায়ে একটা বিভ্রান্তিতে পড়ে গিয়েছি। কোন বাজি পরিবেশবান্ধব, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।’’ এই প্রশ্নটিই তুলছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ-গবেষক সন্তু ঘোষ। তাঁর দাবি, ‘‘প্রস্তুতকারক থেকে বিক্রেতা কেউ জানেন না সবুজ বাজি কী। পুলিশের কাছেও এর ব্যাখা নেই। দেওয়ালির রাতে দেদার বাজি ফাটবে বলেই মনে হচ্ছে।’’
কয়েক দিন আগে হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়ে বর্ধমান শহরে সাইকেলে আলো লাগিয়ে মিছিল করেছিলেন কয়েকজন যুবক-যুবতী। তাঁদের মধ্যে সোহিনী দেবরায়, স্বপ্না মল্লিক সোমরা বলেন, ‘‘সবুজ বাজিতেও দূষণ হবে। আমরা সব রকম বাজির বিরুদ্ধে। আলোর উৎসবে বাজি ফাটানোর প্রয়োজনীয়তা
আছে কি?’’ মহকুমাশাসক (কাটোয়া) জামিল ফতেমা জেবা বলেন, ‘‘বাজি নিয়ে আদালতের নির্দেশ মানার জন্য ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই
বলা হচ্ছে।’’