কাজ দেখছেন নেতা। নিজস্ব চিত্র
এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে সরকারি জায়গা ‘দখল’ করে বেআইনি নির্মাণ নজরে এসেছিল জেলা প্রশাসনের কর্তাদের। নির্মাণ বন্ধের নির্দেশও দেওয়া হয়। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই ওই জায়গায় গিয়ে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় তৈরির কাজ ফের চালু করার নির্দেশ দিলেন জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি তথা জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর দেবু টুডু। তিনি বলেন, “মঙ্গলবার সরকারি জায়গায় তৃণমূলের পার্টি অফিস তৈরি হচ্ছে বলে আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে পার্টি অফিস তৈরির কাজ শুরু করা হল। কেউ আটকাতে পারবে না।’’
এই ‘নির্দেশে’র পিছনে দু’রকম সমীকরণ দেখছে রাজনৈতিক মহল। এক) জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়ার সঙ্গে সহ-সভাধিপতি দেবু টুডুর ‘দ্বন্দ্বে’র রেশ। দলেরই একাংশের দাবি, খণ্ডঘোষ থেকে জিতলেও সভাধিপতির সঙ্গে ব্লক নেতৃত্বের সম্পর্ক মধুর নয়। সরকারি জায়গায় পার্টি অফিস তৈরির কাজ বন্ধ করার পরে ফের চালু করার মধ্যে দিয়ে সভাধিপতিকে ‘হেয়’ করার মানসিকতা কাজ করছে। দুই) মঙ্গলবার ব্লকের প্রশাসনিক বৈঠকে খণ্ডঘোষের ১০টি পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান এমনকি, সদস্যরাও হাজির ছিলেন না। এ দিন জেলাশাসক বিজয় ভারতীর মৌখিক নির্দেশে বন্ধ থাকা পার্টি অফিস তৈরির কাজ ফের শুরু করে ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব সরাসরি জেলাশাসকের সঙ্গে সংঘাতের জায়গাতে চলে গেল।
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদের সদস্য (খণ্ডঘোষ) অপার্থিব ইসলাম বুধবার বলেন, “অবৈধ নির্মাণ বলে জেলাশাসক ও সভাধিপতি কাজ বন্ধ করে দিয়ে গিয়েছিলেন। জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের নির্দেশ মেনেও নিয়েছিলাম। সেই ক্ষোভেই মঙ্গলবার দুপুরে ব্লক প্রশাসনের বৈঠকে পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধানেরা যাননি। এখন দলের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে ফের কাজ শুরু হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘তৃণমূলের প্রতি বৈষম্য দেখাচ্ছে প্রশাসন।’’ সভাধিপতির নাম না করে তাঁর কটাক্ষ, “চেয়ার আঁকড়ে বসে থাকলেই নেতা হওয়া যায় না।’’ যদিও এ সবের কোনও জবাব দিতে নারাজ সভাধিপতি শম্পা ধাড়া। জেলাশাসক বলেন, “কোনও নির্মাণ বন্ধ করার নির্দেশ আমি দিইনি।’’
মঙ্গলবার গ্রাম ঘুরে দেখার সময় খণ্ডঘোষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান জেলাশাসক ও সভাধিপতি। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সেই সময়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক আধিকারিক তাঁদের কাছে অভিযোগ করেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জায়গা দখল করে বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে। ওই জায়গা ঘুরে দেখে বন্ধের নির্দেশ দেন প্রশাসনের কর্তারা। তবে কারা ওই নির্মাণ করছে, তা নিশ্চিত করা যায়নি। পরে তৃণমূল নেতৃত্ব জানায়, বিধায়কের কার্যালয় তৈরির জন্য নির্মাণ চলছিল। ব্লক সভাপতির দাবি, ‘‘যে ঘরে বিধায়ক বসতেন, সেটি বিক্রি হয়ে গিয়েছে। ফলে রাস্তার ধারে ওই জায়গায় ৬০০ বর্গফুটের ঘর তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। সরকারি বা পতিত জমিতে কয়েক হাজার পার্টি অফিস রয়েছে। ওই ঘর তৈরির মধ্যে কোনও অন্যায় নেই।’’
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য বিনোদ ঘোষ জেলাশাসকের কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ করেছেন। তাঁর দাবি, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমি দখল করে তৃণমূল দলীয় কার্যালয় তৈরি করছে। তদন্ত করে বিহিত করার প্রয়োজন রয়েছে। বিজেপির খণ্ডঘোষ ব্লকের পর্যবেক্ষক বিজন ঘোষও বলেন, “নিজেরা সরকারি জায়গা দখল করে পার্টি অফিস করবে, প্রশাসন ঠিক পথে চললে বয়কট করবে, আর অন্য দলের পার্টি অফিসে আগুন লাগাবে—এটাই তৃণমূলের নীতি।’’