গাছ পুড়িয়ে জমির ক্ষতি, বার্তা চাষিকে

বছরখানেক আশপাশের নানা এলাকায় জমিতে এমন আগুন ধরানোর জেরে ভয়াবহ দূষণে জেরবার হয়েছিল দিল্লি। তা বন্ধ করার জন্য চাষিদের নির্দেশও জারি করা হয়। বর্ধমানের চাষিদেরও সেই একই পরামর্শ দিয়েছিলেন কৃষি দফতরের কর্তারা

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৭ ০১:২১
Share:

কালনার খেতে আগুন। নিজস্ব চিত্র

ফসল কেটে নিয়ে যাওয়ার পরে জমিতে পড়ে থাকা অবশিষ্ট অংশ পোড়ানোর ফল কী হতে পারে, দেখেছে দিল্লি। সেই উদাহরণ দেখিয়ে গাছের বাকি অংশ জমিতে না পোড়ানোর জন্য নির্দেশও দিয়েছে কৃষি দফতর। কিন্তু ফল মিলছে না। এ বারও ধান কেটে নেওয়ার পরে খেতে আগুন ধরানোর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে জেলা জুড়েই। কিন্তু এর জেরে দূষণের আশঙ্কার পাশাপাশি জমির উর্বরতাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, জানাচ্ছেন কৃষি-কর্তারা।

Advertisement

বছরখানেক আশপাশের নানা এলাকায় জমিতে এমন আগুন ধরানোর জেরে ভয়াবহ দূষণে জেরবার হয়েছিল দিল্লি। তা বন্ধ করার জন্য চাষিদের নির্দেশও জারি করা হয়। বর্ধমানের চাষিদেরও সেই একই পরামর্শ দিয়েছিলেন কৃষি দফতরের কর্তারা। কিন্তু, আমন ধান কাটার পরেই খেতে পড়ে থাকা অংশ জ্বালিয়ে দেওয়ার সেই দৃশ্য ফিরে এসেছে বর্ধমান থেকে কাটোয়া, কালনা, জামালপুর—সর্বত্রই। স্থানীয় ভাষায় একে বলা হয় ‘নাড়া পোড়ানো’। বিকেল হলেই বিভিন্ন এলাকায় দেখা যাচ্ছে সেই ছবি। কৃষি কর্তারা জানান, এখনও জেলায় অনেক জমিতে ধান পড়ে রয়েছে। সেই ধান কাটার পরে ‘নাড়া পোড়ানো’ শুরু হলে পরিস্থিতি কী হবে, সে নিয়ে উদ্বিগ্ন তাঁরা।

যন্ত্রের সাহায্যে ধান কাটা ও ঝাড়াইয়ের পরে গাছের যে অংশ জমিতে রয়ে যায়, তা পুড়িয়ে ফেলছেন চাষিরা। জামালপুরের শান্তি মাল, মন্তেশ্বরের সাজাহান হোসেনদের বক্তব্য, “আগে খেতমজুরদের দিয়ে ধান কাটানো হত। খড় পাওয়া যেত। এখন যন্ত্র দিয়ে ধান কাটা ও ঝাড়া হয়। তাতে খড় বলে কিছু থাকে না। সে জন্যই গাছের অবশিষ্ট অংশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়।’’ চাষিরা জানান, ধান তোলার পরেই রবিশস্য চাষ করার জন্য জমি তৈরি করতে হয়। গাছের অবশিষ্ট অংশ পুড়িয়ে দিলে সময় ও খরচ, দু’টোই বাঁচে। গাছের অবশিষ্ট অংশ সরানোর ঝামেলাও পোহাতে হয় না।

Advertisement

অনেক চাষির আবার ধারণা, ধান বা গম কাটার পরে গাছের অবশিষ্ট অংশ পুড়িয়ে দিলে যে ছাই হয় তা মাটিতে মিশে জমি উর্বর হয়। কৃষি বিশেষজ্ঞেরা অবশ্য জানান, এই ধারণা একেবারেই ভুল। জমির উর্বরতা বৃদ্ধি তো দূর, এ ভাবে আগুন ধরানোর ফলে মাটিতে মিশে থাকা চাষের সহযোগী পোকামাকড় ও জীবাণু মরে যায়। তাতে আখেরে ক্ষতিই হয়। তার সঙ্গে রয়েছে দূষণের সমস্যা।

জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চাষের জন্য জমির উপরি ভাগের ছ’ইঞ্চি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আগুন লাগালে সব থেকে ক্ষতি হয় জমির ওই অংশে। তাতে জমির উর্বরতা কমে যায়, এটা চাষিদের বুঝতে হবে। আমরা বিভিন্ন ভাবে চাষিদের বোঝাচ্ছি, এ ভাবে আগুন লাগালে জমি বন্ধ্যা পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।’’ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারের পরামর্শ, ‘‘যন্ত্রে ধান ঝাড়ার পরে অবশিষ্ট অংশ জৈব সার তৈরির কাজে লাগালে চাষিরা উপকৃত হবেন। সেই সঙ্গে দূষণও রোধ হবে।’’

কিন্তু এই সব পরামর্শ চাষিরা কতটা মানবেন, সংশয় সে নিয়েই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement