প্রতীকী ছবি
নির্দিষ্ট সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় বীজতলা তৈরিতে সমস্যার অভিযোগ গত কয়েক বছরে বারবারই উঠেছে। চাষের জন্য জল কিনতে হয়েছে বলেও জানিয়েছেন অনেক চাষি। তাই এ বার নিয়মিত বৃষ্টি হওয়ায় কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা ছাড়াও খুশি চাষিদের একটি বড় অংশ। তাঁরা মনে করছেন, এই বৃষ্টি বীজতলা তৈরিতে কাজে লাগবে, মাটি ভিজে থাকায় চাষ করতে সুবিধা হবে। আবার পরিবেশ ও কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, টানা বৃষ্টি হওয়ায় ‘নাড়া পোড়ানো’ বন্ধ রয়েছে। ধান কাটার পরে পড়ে থাকা খড় বৃষ্টির জলের সঙ্গে মাটিতে মিশে জৈব সারে পরিণত হচ্ছে, যা আমন চাষের সহায়ক হবে।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছর বীজতলা তৈরির সময়ে পূর্ব বর্ধমান জেলায় বৃষ্টির ঘাটতি ছিল প্রায় ৫৭ শতাংশ। এখন জেলায় বীজতলা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত দশ দিনে গড় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১২৮.৫ মিলিমিটার, যা স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই বেশি। সে জন্য চলতি বছরে জেলায় ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কৃষি দফতর। দফতরের কর্তাদের আশা, গত বছর জল পেতে কালঘাম ছুটেছিল চাষিদের। জল কিনে চাষ করার পরেও জেলায় ৩,৭৭,৭১০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছিল। উৎপাদনও ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি (প্রতি হেক্টরে ৫.৫৯ টন)। এ বার জেলায় ৩ লক্ষ ৮২ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
গলসির কিনোরকোনা গ্রামের জাফর কাজি, জামালপুরের বাবলু দাসদের বক্তব্য, ‘‘বীজতলা তৈরি করতে গিয়েই গত কয়েক বছর ধরে জলের অভাব ভীষণ ভাবে টের পেয়েছি। এ বছর টানা বৃষ্টি হওয়ায় বীজতলা তৈরিতে অসুবিধা হবে না। সময়ে বীজতলা তৈরি করতে পারায় বীজও ভাল হবে। এই বৃষ্টি চাষের সহায়ক হয়ে উঠবে।’’ ভাতারের বাবলু শেখ, দেওয়ানদিঘির সমীরণ সাঁতরাদের কথায়, ‘‘আমন চাষে সাধারণত বৃষ্টির দিকে চাষিরা তাকিয়ে থাকেন। গত কয়েক বছর বৃষ্টি না হওয়ায় হা-হুতাশ তৈরি হয়েছিল। চাষের খরচও বেড়ে গিয়েছে। এ বছর বাড়তি খরচের হাত থেকে বাঁচা যাবে।’’ তবে মেমারি ২, কালনা ২ ব্লকের বেশ কিছু চাষি জানান, নিত্য বৃষ্টিতে বীজতলা তৈরি করায় সমস্যা হচ্ছে। মেমারির অশোক ঘোষ, স্বরূপ পাল, কালনার শান্তনু রায়, সইফুদ্দিন শেখদের দাবি, ‘‘টানা বৃষ্টির জন্যে বীজগুলি এক জায়গায় জড়ো হয়ে যাচ্ছে। আগাছা আটকানোর ওষুধ দিলেও তা বৃষ্টিতে ধুয়ে যাচ্ছে।’’
জেলা কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা (প্রশাসন) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, কয়েকজন শুরু করলেও বীজতলা তৈরির রিপোর্ট তাঁদের কাছে আসেনি। তিনি বলেন, ‘‘এই বৃষ্টি বীজতলা তৈরিতে কাজে লাগবে। তেমনই, নাড়া পোড়ানোও বন্ধ হবে। যন্ত্রে ধান কাটার পরে মাটিতে যে অংশ পড়ে থাকবে, তা জলের সঙ্গে মাটিতে মিশে জৈব সারে পরিণত হবে। জমির উর্বরতা বাড়বে, আবার পরিবেশ দূষণও রোধ হবে।’’
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিজ্ঞানী সৌমেন বেরা বলেন, ‘‘পড়ে থাকা খড় থেকে শুধু জৈব সার নয়, তার সঙ্গে মাটির উর্বরতা বাড়াতে সহায়ক, এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদানও মাটিতে মিশবে।’’ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানী অরূপরতন ঘোষের মতে, ‘‘দু’এক জায়গায় নাড়া পোড়ানো শুরু হয়েছিল। টানা বৃষ্টির জন্য গত কয়েক বছরের মতো বিপুল হারে নাড়া পোড়ানো সম্ভব হবে না। তাতে বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে ছড়াবে কম।’’