কাটোয়ার একটি পরীক্ষাকেন্দ্রে আগের দিন চলছে নানা প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র
গত বারের মতো এ বারও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ছাত্রের তুলনায় ছাত্রী সংখ্যা বেশি পূর্ব বর্ধমান জেলায়। তবে আশঙ্কার কারণও রয়েছে। কারণ, গত বারের তুলনায় প্রায় আড়াই হাজার ছাত্রী কম পরীক্ষা দিচ্ছেন এ বার। এক ধাক্কায় এত ছাত্রী কমে যাওয়ায় চিন্তিত বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকেরা। জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ (শিক্ষা ও ক্রীড়া) নারায়ণ হাজরা চৌধুরী বলেন, “বিষয়টা চিন্তার। এ ব্যাপারে জেলা স্কুল পরিদর্শককে বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে বলব।’’
আজ, বৃহস্পতিবার থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এ বার জেলায় মোট পরীক্ষার্থী ৩৭,৪৩৫ জন। তার মধ্যে ছাত্র ১৭,৮১৪ জন। আর ছাত্রী ১৯,৬২১ জন। গত বছর এই সংখ্যাটাই ছিল যথাক্রমে ১৭,৩৯৪ জন ও ২২,০১৯ জন।
ছাত্রী সংখ্যা কমার কারণ হিসাবে কমবয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার প্রবণতাকেই দায়ী করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ। প্রশাসনের সচেতনতা প্রচার সত্ত্বেও আকছারই যে নাবালিকা বিয়ে এবং তা আটকানোর ঘটনা সামনে আসে, তাতে বোঝা যায় পরিস্থিতি বদলাতে এখনও অনেক পথ বাকি। গ্রামাঞ্চলের শিক্ষিকাদের একাংশের দাবি, খবরে যা সামনে আসে তার অনেক বেশি মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই।
বর্ধমানের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ভাস্বতী লাহিড়ির কথায়, “একাদশ শ্রেণিতে ওঠার পরেই অনেক পড়ুয়া আঠারো বছর পেরিয়ে যায়। তখন তাঁদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করেন না অভিভাবকেরা। আমাদেরও কিছু করার থাকে না।’’ কাটোয়ার ডিডিসি গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কবিতা সরকার আবার বলেন, “মাধ্যমিকের পরে মেয়েদের মধ্যে বাইরে গিয়ে পড়ার ঝোঁক বেড়েছে। সে কারণেও ছাত্রীর সংখ্যা কম দেখাতে পারে।’’ বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক সুদীপ্ত গুপ্ত মনে করেন, “মাধ্যমিকের পরে, স্কুলছুট বাড়ছে, সেটা বোঝাই যাচ্ছে।’’ যদিও তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি তপন দাস বলেন, “এখনও পর্যন্ত কেন ছাত্রীর সংখ্যা কমে গেল, তা খতিয়ে দেখা হয়নি।’’
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে জানা যায়, এ বার মোবাইল বা কোনও রকম বৈদ্যুতিন যন্ত্র নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করা যাবে না বলে পরীক্ষার্থীদের সতর্ক করবে পুলিশ। তবে দেহ তল্লাশি করা যাবে না বলে সংসদের নির্দেশ রয়েছে। পুলিশের বার্তা, মোবাইল ফোন নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকলে পরীক্ষা বাতিল তো হবেই, কঠোর শাস্তিও হবে। শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী বা পরীক্ষাকেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত কেউ-ও মোবাইল নিয়ে পরীক্ষা হলে ঢুকতে পারবেন না। পরীক্ষাকেন্দ্রের মূল দরজায় এক জন দাঁড়িয়ে এ বিষয়ে সতর্ক করবেন। আবার পরীক্ষার ঘরে ‘মোবাইল ওয়াচার’-এ দায়িত্ব পালন করবেন এক শিক্ষক। কারও কাছে মোবাইল ফোন আছে কি না ১০টা থেকে ১৫ মিনিট ধরে লক্ষ্য রাখবেন তিনি। তাঁর কাছ থেকে সব ঠিক আছে, বার্তা পাওয়ার পরেই প্রশ্ন বিলি শুরু হবে। তার পরেও এক ঘণ্টা পরীক্ষার্থীরা মোবাইল ব্যবহার করছেন কি না, তা দেখবেন তিনি।
অ্যাডমিটের কার্ডের জন্য কোনও পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল যাতে না হয় সে দিকেও খেয়াল রাখা হয়েছে। সংসদের নির্দেশ, কোনও কারণে পরীক্ষার্থী অ্যাডমিট আনতে না পারলে মুচলেকা দিয়ে পরীক্ষা দিতে পারবেন। তবে পরের পরীক্ষাগুলিতে অ্যাডমিট কার্ড না আনলে পরীক্ষা বাতিল করা হবে। তেমনি বাসের দেরি বা অন্য কারণে নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে পারছেন না দেখলে কাছাকাছি পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকে সে বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রেও পরীক্ষার্থীকে মুচলেকা দিতে হবে।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের জেলা উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য রথীন মল্লিকের দাবি, “প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রের শৌচাগার ও আশেপাশের এলাকা প্রতিদিন পরিষ্কার করার জন্য পুরসভাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সব কেন্দ্রেই স্বাস্থ্য দফতরের দল রাখার কথা বলা হয়েছে।’’ জেলা শিক্ষা দফতরের সহকারী পরিদর্শক গোপাল পালও বলেন, “পরীক্ষার্থীরা যাতে সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষা দিতে পারেন, তার জন্য সব রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’