কাটোয়া স্টেশন বাজারে সব্জির পসরা। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
জামাইয়ের পাত নানা পদে ভরিয়ে তুলতে সকাল-সকাল ব্যাগ হাতে বেরিয়েছিলেন শ্বশুরমশাইয়েরা। প্রচণ্ড গরমে তো বটেই, তার সঙ্গে মাছ-সব্জির দাম শুনেও রীতিমতো গলদঘর্ম হতে হল তাঁদের।
জামাইষষ্ঠীতে ইলিশের চাহিদা থাকে বরাবরই। শনিবারও বাজারে গিয়ে অনেকেই প্রথমে খোঁজ করেছেন ইলিশের। দুর্গাপুরের নানা বাজারে দু’তিন দিন আগেও কিলোখানেক ওজনের ইলিশের দাম ছিল ১১০০ টাকা বা তার আশপাশে। এ দিন তারই দাম উঠেছে ১৪০০ টাকায়। তার থেকে কম ওজনের ইলিশ যেখানে বিক্রি হচ্ছিল ৮০০ টাকায়, এ দিন তা হাজার টাকার বেশি দামে বিকিয়েছে। শুধু দুর্গাপুর নয়, বর্ধমান থেকে আসানসোল— সর্বত্রই ইলিশের দাম ছিল বেশ চড়া। কালনায় ৮০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১৬০০ টাকায়।
ইলিশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চিংড়ি, পাবদা, চিতলের মতো মাছের দামও। কাটোয়ায় যেমন চিংড়ি বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম দরে। তবে রুই-কাতলার দামে খুব বেশি হেরফের হয়নি বলে জানান বিক্রেতারা। দুর্গাপুরের বেনাচিতির মাছ ব্যবসায়ী কালীদাস ধীবর বলেন, ‘‘অনেকেই এসে দাম বেশি কেন, সে নিয়ে প্রশ্ন করছেন। জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে মাছের দাম তো একটু বাড়বেই।’’ মাছ ব্যবসায়ী হেমন্ত শীট বলেন, ‘‘পাইকারি বাজারগুলিতে দাম চড়ায় খুচরো বাজারেও দাম বেড়েছে।’’ দুর্গাপুর স্টেশন বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রতন দাস আবার বলেন, ‘‘এ দিন সে ভাবে মাছের চাহিদা ছিল না। তবে রবিবার চাহিদা বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। তার সঙ্গে দাম আরও বাড়তে পারে।’’
সব্জির দাম অবশ্য বেড়েছে সামান্যই। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, টম্যাটোর দাম একটু বেড়েছে। ২৫ টাকা থেকে বেড়ে তা কোথাও বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকায়, কোথাও আবার ৩৫ টাকায়। দাম বেড়েছে ফুলকপিরও। আগে যে ফুলকপি ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এ দিন তার দাম ছিল ৩০ টাকা। চণ্ডীদাস বাজারের সব্জি ব্যবসায়ী রতন সাউ জানান, সব সব্জির দাম এ দিন না বাড়লেও আজ, রবিবার জামাইষষ্ঠীর দিন হয়তো খানিকটা বাড়বে।
আসানসোলের বাজারে। শনিবার শৈলেন সরকারের তোলা ছবি।
তবে শনিবারই ফলের দাম চড়েছে অনেকটা। ব্যবাসায়ীরা জানান, দিন দুয়েক আগেও যে গোলাপখাস আম ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, এ দিন তা ছিল ৪৫ টাকা। বর্ধমানের উদয়পল্লি, তেঁতুলতলা বা রানিগঞ্জ বাজারে হিমসাগর আমের দাম ২৫ টাকা থেকে ৩৫ টাকায় পৌঁছেছে। তবে সব থেকে বেড়েছে লিচুর দাম। দুর্গাপুরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গিয়েছে, মাঝারি মানের লিচু ৮০ টাকা থেকে বেড়ে ১০০ বা তারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বর্ধমান, কালনা, কাটোয়াতেও লিচু বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের কর্মী তুহিন রায় জানান, দাম আরও বাড়তে পারে, এই আশঙ্কায় আগের দিনই বাজার সেরে রাখলেন। তিনি বলেন, ‘‘এখনই মাছের দাম এত বেড়ে গিয়েছে, রবিবার কী হবে কে জানে!’’