‘সুফল বাংলা’র স্টল থেকে বিক্রি করা হচ্ছে আলু। নিজস্ব চিত্র।
কালীপুজো ও দীপাবলির মুখে বৃহস্পতিবার অগ্নিমূল্য আনাজ বাজার। আলু, পেঁয়াজের পাশাপাশি, অন্য আনাজ কিনতেও হাত পুড়ছে ক্রেতার। এই পরিস্থিতিতে কৃষি বিপণন দফতর ‘সুফল বাংলা’র এক ডজন অস্থায়ী স্টল থেকে ন্যায্য মূল্যে আলু বিক্রি করছে। কিন্তু এ ভাবে কত দিন চলবে তা নিয়ে সংশয়ে দফতরেরই কর্মী-আধিকারিকদের একাংশ।
সাতসকালে থলি হাতে বৃহস্পতিবার বাজারে এসেছিলেন রূপক গঙ্গোপাধ্যায়। একটি বহুজাতিক বেসরকারি সংস্থার কর্মী রূপকবাবু সদ্য অবসর নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আরও বেশ কিছু জিনিসপত্র কিনব ভেবেছিলাম। কিন্তু যা দাম, তাতে আলু আর ফুলকপি কিনে বাড়ি ফিরছি।’’
খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, এ দিন শিল্পাঞ্চলের সব বাজারেই জ্যোতি আলু কেজি প্রতি ৪২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। চন্দ্রমুখী আলু জেলায় প্রায় পাওয়াই যায় না। পেঁয়াজ ৫৯ টাকা কেজি দরে, প্রমাণ সাইজের একটি ফুলকপি ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। টোম্যাটো, বাঁধাকপি, বেগুন ৭০ টাকা কেজি করে বিক্রি হয়েছে। এমনকি, ধনেপাতার দর ৮০ টাকা প্রতি কেজি! ক্রেতাদের ক্ষোভ, সরকার বারবার দাম নিয়ন্ত্রণের কথা বললেও, বাজারে তার কোনও প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। পুজোর সময়ে প্রশাসনের তরফে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হলেও কার্যক্ষেত্রে তা-ও দেখা যায়নি বলে অভিযোগ।
আসানসোলের মূল বাজার থেকে বেরনোর সময়ে ইসিএল কর্মী পুষ্পেন দাস বলেন, ‘‘এখনই এই অবস্থা। শনি, রবি ও সোমবার আর বাজারেই আসতে পারব না।’’ ক্রেতাদের পাশাপাশি, বিড়ম্বনায় পড়ছেন আনাজ বিক্রেতাদের একাংশ। বার্নপুর বাজারের পাইকারি বিক্রেতা অশোক মিশ্র বলেন, ‘‘এমন দামের কারণে আমাদের বিক্রি কমে যাচ্ছে। ব্যবসা মার খাচ্ছে।’’
কিন্তু দামের এই হাল কেন? বিপণন দফতরের কর্মীদের একাংশ দাবি করেছেন, জোগানে কোনও সমস্যা নেই। নেই ফড়েদের উৎপাতও। উৎসবের মরসুম হওয়ায় স্থানীয় ভাবেই দাম বাড়িয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা যদিও অভিযোগঅস্বীকার করেছেন।
তবে দাম একেবারেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না, এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে কৃষি বিপণন দফতর। দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর দিলীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘আনাজের দাম নিয়ন্ত্রণে প্রতি দিনই জেলার নানা টাস্ক ফোর্সের একটি দল হানা দিচ্ছে। অনিয়ম দেখলেই পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’ যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টাস্ক ফোর্সের এক আধিকারিক জানান, টাস্ক ফোর্সের সদস্যেরা যতক্ষণ বাজারে থাকছেন, ততক্ষণ দাম নিয়ন্ত্রণে থাকছে। বাজার থেকে তাঁরা বেরিয়ে যাওয়ার পরেই ফের চড়া দাম নেওয়ার অভিযোগ করছেন ক্রেতারা।
এই পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে জেলায় ‘সুফল বাংলা’র অস্থায়ী ১২টি স্টল খুলে ২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করা হচ্ছে। এক জন ক্রেতা এক বারে তিন কেজি পর্যন্ত আলু পাচ্ছেন। এ ছাড়া, পেঁয়াজের দরের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে বলেজানান দিলীপবাবু।