গঙ্গানন্দপুরে মৎসজীবীদের পুজো। নিজস্ব চিত্র।
মৃন্ময়ীকে আরাধনার আগে এখানে ধুপ-ধুনো দিয়ে মানুষের পুজো সারা হয়! প্রায় বছর পনেরো ধরে এমনটাই রেওয়াজ পূর্বস্থলীর শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের গঙ্গানন্দপুর গ্রামে মৎসজীবীদের আয়োজিত বিলেকালীর পুজোয়। এখানে মায়ের ভোগ হিসেবে দেওয়া হয় চুনোমাছ। তাই দেবীর অন্য নাম চুনোকালী।
গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বাঁশদহ বিলের গায়েই রয়েছে মন্দির। মন্দির চত্বরে গিয়ে দেখা গেল, শনিবার সকাল থেকেই রান্না বসে গিয়েছে। বেলা ১২টা নাগাদ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র হাতে প্রায় ৫০ জনের প্রমীলা বাহিনিও হাজির। পুজোর অন্যতম আয়োজক মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের সঙ্গে সেই বাহিনিই পাল পাড়া থেকে প্রতিমা নিয়ে এল। মন্দির চত্বরে ততক্ষণে অবশ্য ভিড় জমেছে। সকলেই বসে পড়েছেন গাছতলায়। প্রথমেই ধুপ-ধুনো দিয়ে আগত ভক্তদের পুজো করা হল। তারপরে খিচুড়ি, পায়েস, তরকারি-সহ পাত পেড়ে খাওয়া। এলাকার বাসিন্দা লক্ষ্মীরানি মুর্মু, ফুলমণি বাস্কেরা বলেন, ‘‘প্রতি বার পুজোর দুপুরে পেটপুরে খাওয়া হয়। যাওয়ার সময়ে রাতের জন্য কিছু খাবার নিয়েও যায়।’’ মায়ের পুজোর আগে মানুষের পুজো কেন? উত্তরে মন্ত্রী স্বপনবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘মানুষের মধ্যেই ঈশ্বর রয়েছেন। এলাকার মায়েদের পুজো করলে মা কালীও খুশি হবেন, এই বার্তা পৌঁছে দিতেই এমন উদ্যোগ।’’
মৎসজীবীদের এই পুজোয় মণ্ডপটিও সাজানো হয়েছে জাল, পোলুই-সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে। দেবীর ভোগের জন্য সকাল সকাল মৌরলা, চাঁদা, চুনো, ল্যাটা, কই-সহ বিভিন্ন মাছ ধরে ফেলেছেন জেলেরা। এই মাছগুলি রান্না করেই মাটির চারটি পাত্র করে দেবীর কাছে নিবেদন করা হয়। পুজো শুরুর আগে বিলের জলে কলাগাছের টুকরোয় করে এক হাজার মাটির প্রদীপও ভাসানো হল। এ বার পুজোতে ছোটদের জন্য উদ্যোক্তারা সাজিয়ে রেখেছিলেন আইসক্রিমের পসরাও।
পুজো উপলক্ষে আলোকসজ্জাও ছিল নজরকাড়া। রয়েছে দু’দিনের বাউল গানের উৎসবও।