গলসিতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ চাষিদের। বুধবার বিকেেল। ছবি: কাজল মির্জা
এলাকায় সহায়ক মূল্যে ধান কেনার তেমন গতি না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। তার উপরে আবার গলসি ১ ও ২ ব্লকে চাষিদের কাছে জমির পরিমাণ দেখে বিঘা পিছু ৯৬০ কেজি ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্লক প্রশাসন— এই অভিযোগে বুধবার গলসি ১ ব্লকের সিমনোড়ি মোড়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন প্রায় ন’টি গ্রামের বেশ কিছু চাষি। এর জেরে প্রায় ৪০ মিনিট ধরে বহু গাড়ি আটকে পড়ে।
ওই চাষিদের অভিযোগ, জমির প্রামাণ্য নথি দেখানোর নামে হয়রান করা হচ্ছে। তাঁদের দাবি, ব্লক কৃষি দফতরের হিসেবই বলছে, এ বার এলাকায় ধানের ফলন বিশেষ ভাল হয়নি। আবহাওয়ার কারণে ধানের বহু শিষ সাদা ছিল। সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারলে লোকসান হবে না, আশায় ছিলেন তাঁরা। তাই নথিভুক্ত চাষিদের থেকে প্রথম দফায় মাথাপিছু সর্বোচ্চ ৪৫ কুইন্টাল ধান কেনার সরকারি সিদ্ধান্ত এখানেও কার্যকর করতে হবে বলে দাবি তাঁদের।
চাষিদের দাবি, এই দুই ব্লকে প্রচুর ধান উৎপাদন হলেও সে ভাবে সহায়ক মূল্যে ধান কেনা এখনও শুরু হয়নি। বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু শিবিরে ধান কেনা চলছে। সেই সঙ্গে ব্লক প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ১ বিঘা জমির জন্য ৯৬০ কেজি ধান বিক্রি করতে পারবেন চাষি। বিক্ষোভকারীদের দাবি, কোনও বছর জমির কাগজপত্র দেখাতে হয়নি। এ বার তা দেখাতে হচ্ছে। জমির সমস্ত নথিপত্র না থাকলে চূড়ান্ত হয়রান করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁদের।
সিমনোড়ি, রাকোনা, মানিকবাজার, ঝাড়ুল, খাঁপাড়া, নুরকোনা-সহ নানা গ্রামের চাষিরা এ দিন বিকেলে অবরোধে শামিল হন। বাসুদেব সূত্রধর, শেখ মিরাজদের দাবি, ‘‘ব্লকের বেশিরভাগ চাষিই জমির পরিমাণের নথি দেখাতে পারবেন না। কারণ, আগে থেকে প্রশাসন তা ঘোষণা করেনি। এখন চাষি কাগজ জোগাড় করবেন, না কি ধান বিক্রি করবেন? চাষিদের শুধু হয়রানি করা হচ্ছে!’’ পাঁচকড়ি গড়াই, শেখ জাকির হোসেনদের কথায়, "গত বোরো মরসুমে লকডাউনের জেরে শ্রমিকের অভাব ও অতিরিক্ত বৃষ্টিতে পাকা ধান সময়ে কাটতে না পারায় লোকসান হয়েছিল। হাতে নগদ প্রায় নেই। এখন ধান বিক্রি না হলে পথে বসতে হবে!’’
অবরোধের খবর পেয়ে গলসি থানার পুলিশ পৌঁছয়। আলোচনার আশ্বাসে প্রায় ৪০ মিনিট পরে অবরোধ ওঠে। এক্সপ্রেসওয়েতে যানজট তৈরি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন অনেক যাত্রী। গলসির বিধায়ক অলোককুমার মাজি বলেন, ‘‘সারা রাজ্যে একই নিয়ম। জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে। চাষিদের সমস্যা শুনেছি। আলোচনা চলছে।’’
গলসি ১ পপঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি অনুপ চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, ‘‘চাষিদের অভিযোগ পুরোপুরি ঠিক নয়। ধান কেনার একাধিক শিবির চলছে। সমবায়গুলিও ধান কিনছে।’’ বিডিও (গলসি ১) দেবলীনা দাসও বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনের নিয়ম মেনেই ধান কেনা হচ্ছে। চাষিদের দাবি শুনেছি। আলোচনার মাধ্যমে মেটানো হবে।’’