শিল্পকর্মে ব্যস্ত। নিজস্ব চিত্র
শিল্পমেলায় তাঁকে দেখা যায়, নিজের শিল্পকর্মের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। কিন্তু এ বার তাঁর শিল্পকর্মই শোভা পাবে ইংল্যান্ডের হ্যারো শহরে। জানা গিয়েছে, বুদবুদের কোটা গ্রামের সরবিন্দু সূত্রধরের তৈরি স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি পাড়ি দিচ্ছে ইংল্যান্ডে। সেপ্টেম্বরেই তা রওনা দেবে বিলেতে। এখন তাই চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি, জানান শিল্পী।
কী ভাবে তৈরি হল এই যোগসূত্র? হ্যারো শহরের প্রাক্তন মেয়র মৃণাল চৌধুরীর জন্ম সাবেক বর্ধমানের চৈতন্যপুরে। ২০১১-য় হ্যারো শহরের মেয়র হন তিনি। ১৯৬২-তে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনার জন্য তিনি লন্ডন চলে যান। পরে তিনি ব্রিটিশ টেলিকমে চাকরি নেন। ১৯৯০-এ স্বেচ্ছাবসর নেওয়া মৃণালবাবু ২০০২ সালে প্রথম বারের মতো হ্যারো শহরের কাউন্সিলর হন। এই মৃণালবাবুই উদ্যোগী হয়েছেন শহরে বিবেকানন্দের মূর্তি স্থাপনে। বিষয়টি জানতে পেরে মৃণালবাবুর আত্মীয় বর্ধমানের বাসিন্দা অরণ্য মুখোপাধ্যায় যোগাযোগ করেন সরবিন্দুবাবুর সঙ্গে।
শিল্পী জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে মূর্তি তৈরির কাজ প্রায় শেষ। মূর্তিটি উচ্চতায় সাড়ে চার ফুট। কোমর পর্যন্ত লম্বা। সরবিন্দুবাবু জানান, মূর্তি গড়তে সহযোগিতা করেছেন ভাগ্নে, বনকাটির আনন্দময় সূত্রধর। এখন চলছে সরকারি কাগজপত্র তৈরির কাজ। সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই মূর্তি রওনা দেবে ইংল্যান্ডে।
তবে এই প্রথম সরবিন্দুবাবুর শিল্পকর্ম বিদেশে যাচ্ছে না। সরবিন্দুবাবু জানান, তাঁর তৈরি ফাইবারের দুর্গা প্রতিমা লন্ডনে, ব্রোঞ্জের শ্রীরামকৃষ্ণের মূর্তি পাড়ি দিয়েছে আমেরিকায়।
এ হেন সরবিন্দুবাবুর শিল্পী হওয়ার গল্পটা কেমন? সরবিন্দুর পরিবারের পূর্বপুরুষেরা মূলত গরুর গাড়ির চাকা তৈরি করতেন। সেই সঙ্গে অল্পবিস্তর হাতের কাজ। তবে সরবিন্দুবাবু জানান, ছোট থেকেই তাঁর অন্য রকম কিছু করার ইচ্ছে ছিল। এলাকা সূত্রে জানা যায়, ছোটবেলায় অন্যদের যখন খেলার মাঠে দেখা যেত, সরবিন্দুবাবু তখন মগ্ন থাকতেন কাদা-মাটি নিয়ে। চলত মূর্তি তৈরি। ন’বছর বয়সেই দাদু ও বাবার কাছে হাতের কাজ শিখতে শুরু করেন তিনি। শিল্পকর্মে মন দেওয়ায় অষ্টম শ্রেণির পরে আর পড়াশোনা এগোয়নি। বয়স তখন বছর কুড়ি। সরবিন্দুবাবু চলে যান বর্ধমানে। সেখানে তাঁর শিক্ষা শিল্পী হরিহর দে, পূর্ণেন্দু দে’র কাছে।
মূলত কী ধরনের কাজ করছেন সরবিন্দুবাবু? তিনি জানান, প্লাস্টার অফ প্যারিস, স্টোন ডাস্ট, ফাইবার, ধাতব চাদর, বিশেষ ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য প্রভৃতি দিয়ে নানা ধরনের মূর্তি ও স্থাপত্য তৈরি করেন তিনি। সেই সঙ্গে চলে টেরাকোটা, পোড়ামাটির কাজও। শিল্পী জানান, তাঁর গড়া স্থাপত্য বর্ধমান, দুর্গাপুর-সহ নানা শহরের শিল্পপ্রেমীদের ঘরে জায়গা করে নিয়েছে।
তবে নিজের কাজ নিয়ে এখনও সন্তুষ্ট নন সরবিন্দুবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘কাজ করতে করতেই প্রতি দিন নতুন করে শিখি। বইপত্র, ম্যাগাজিন পড়ি। আরও ভাল কাজ করতে চাই।’’