কোনও বছর অনাবৃষ্টি, আবার কখনও অতিবৃষ্টিতে জমি থেকে ফসল ঘরে তুলতে পারেন না চাষিরা। যাঁরা ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে চাষ করেন তাঁরা শস্য বিমায় কিছুটা ক্ষতিপূরণ পেলেও প্রান্তিক চাষিরা পড়েন অথৈ জলে। এক দিকে ফসল নষ্ট, অন্য দিকে মহাজনের ঋণের ফাঁদে পড়ে কাঁদতে হয় জেলার বহু চাষিকেই। এ বার অবশ্য ছবিটা বদলাতে পারে।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর থেকে প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার আওতায় আসতে চলেছেন চাষিরা। এই বিমার জন্য তাঁদের কোনও টাকা দিতে হবে না। কিস্তির সমস্ত খরচই বহন করবে রাজ্য সরকার। রাজ্যের উপ কৃষি অধিকর্তা (বিশ্ব ব্যাঙ্ক) গৌর সিংহ বলেন, “চাষিদের শুধু মাত্র নির্দিষ্ট ফর্মে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আবেদন করতে হবে।’’ জানা গিয়েছে, আবেদনের সময়সীমাও দু’সপ্তাহ বাড়িয়েছে রাজ্য সরকার। প্রথম পর্যায়ে ৩১ জুলাই আবেদনের শেষ তারিখ থাকলেও কয়েকদিন আগে নবান্নে কৃষি দফতরের বৈঠকে তা বাড়িয়ে ১৫ অগস্ট করা হয়েছে।
এই সুবিধা কারা পাবেন?
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমানে বিমার আওতায় আপাতত আসছে আউশ, আমন ধান ও পাট। এত দিন ব্যাঙ্ক ঋণ নেওয়া চাষিরাই বিমার সুবিধা পেতেন। এ বারে এই প্রকল্পে সব চাষিরাই বিমার সুরক্ষা পাবেন। জেলা কৃষি দফতরের অধিকর্তা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সব চাষিই এই সুবিধা পাবেন। জমির পরচা ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথি-সহ আবেদন করতে হবে।” নিকটবর্তী কৃষি দফতরে বা দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থার কর্মীদের কাছেও আবেদন করতে পারবেন চাষিরা। আর জমির মালিক না হলে? জানা গিয়েছে, বিমার জন্য আবেদন করতে হলে জমি নিজের নামে না থাকলেও চলবে। উত্তরাধিকার সূত্রে যাঁরা চাষ করছেন, তাঁরাও শস্য বিমা করাতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে জমির পরচার সঙ্গে উত্তরাধিকার ও চাষ করছেন এমন শংসাপত্র জমা দিতে হবে। ভাগচাষিদের পঞ্চায়েতের প্রধানের কাছে ও জমির মালিকের কাছে চাষ করছেন ওই শংসাপত্র জমা করতে হবে।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ জেলায় আউশ ও আমন মিলিয়ে ৪ লক্ষ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়। এখনও পর্যন্ত ২৫ শতাংশ জমিতে ধান রোয়ার কাজ করেছেন চাষিরা। বিমা সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান জেলায় হেক্টর প্রতি আউশ ও আমনে বিমার মূল্য হল ৪৭ হাজার ২৫০ টাকা, আর পাটের বিমা মূল্য ৬১ হাজার ২৫০ টাকা। গৌরবাবু বলেন, “চারটি ধাপে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। বীজতলার তৈরির পরেও রুইতে না পারলে, ফসল শুকিয়ে গেলে বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলে ক্ষতিপূরণ পাবেন চাষিরা।”
জেলা কৃষি অধিকর্তা বলেন, “গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপ করে ক্ষতিপূরণ দেবে বিমা সংস্থা। আমাদের কাজ হচ্ছে শুধু মাত্র প্রচার করা।” যদিও জেলা চাষিদের একটা বড় অংশ বিনামূল্যে বিমার সুবিধার ব্যাপারে এখনও বহিত নন। ব্লক কৃষি দফতরগুলিতে মাত্র দু’দিন আগে ফর্ম পৌঁছেছে। এ অবস্থায় এত বড় জেলায় সব চাষি কি এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে? কৃষি দফতর জানিয়েছে, প্রতিটি সভায়, ফ্লেক্স, ব্যানার ও মাইক করে প্রচার চালানো হচ্ছে। বিমা সংস্থার কর্মীরাও গ্রামে গিয়ে সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে আবেদন সংগ্রহ করছে। ফলে, নির্দিষ্ট সময়ের আগে সব চাষির কাছে পৌঁছানো যাবে বলে আশা করছে কৃষি দফতর।