প্রতীকী ছবি।
কয়েকদিন আগেও খোলা বাজারে কেজি প্রতি জ্যোতি আলুর দাম ছিল ৪০ টাকা। দাম নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সরকার শিবির করে ২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করে। এখন আলুর দাম ২০-২২ টাকা কেজিতে নেমেছে। সরকারি দরে আলু কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন না ক্রেতারাও। পড়ে থাকা আলু নিলামে তুলে চার লক্ষ টাকা আয় করেছে কৃষি বিপণন দফতর।
সোমবার ওই দফতরের পূর্ব বর্ধমানের ডেপুটি ডিরেক্টর সুদীপ পালের দাবি, ‘‘অন্য জেলার চেয়ে পূর্ব বর্ধমানে প্রতি বস্তায় নিলামে আলুর দাম বেশি মিলেছে। প্রাপ্ত টাকা সরকারের কোষাগারে জমা করা হয়েছে।’’ হিমঘরগুলিতে সরকারের আলু এখনও মজুত রয়েছে। সেই সব আলুর বস্তা মিড-ডে মিলের জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার বর্ধমানের কৃষক বাজার, বংপুর মোড়-সহ তিনটে জায়গা থেকে নিলামে আলু বিক্রি করা হয়। মোট ৬২০ প্যাকেট (৫০ কেজিতে এক প্যাকেট) আলু নিলামে তোলা হয়। জেলার বিভিন্ন এলাকার আলু ব্যবসায়ীরা নিলামে যোগ দেন। প্রতি প্যাকেট ৬৮০ টাকা দামে বিক্রি হয়। অর্থাৎ, সরকারের ঘরে ঢুকেছে ৪,২১,৬০০ টাকা। তবে নিলামে আলু কেনার পরে তার মান ও প্যাকেটের ওজন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাংশ ব্যবসায়ী। তাঁদের দাবি, বেশ কিছু আলুতে ‘কল’ বেরিয়ে গিয়েছে। আর বেশির ভাগ প্যাকেটের ওজন দাঁড়িয়েছে ৪৮ কেজি। আলু ব্যবসায়ী সমিতির জেলা সভাপতি সাগর সাহা বলেন, ‘‘সংগঠিত ভাবে ব্যবসায়ীরা নিলামে যোগ দেওয়ায় সরকার আলুর দাম পেয়েছে।’’
তবে যথাসময়ে হিমঘর থেকে আলু বার করা হলে সরকারি দামে আলু বিক্রি করতে হত না বলে মনে করছেন অনেকে। সে ক্ষেত্রে খোলা বাজারেও আলুর দাম বাড়ত না। জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমানের হিমঘরে এখনও ২,৩৪৬ টন আলু মজুত রয়েছে। কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা যায়, ওই আলু উত্তরবঙ্গ ও মুর্শিদাবাদের মিড-ডে মিলের জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে বিরোধীদের অভিযোগ, ‘সিদ্ধান্তহীনতা’র জন্যই আলু নিয়ে নাকানিচোবানি খেতে হল প্রশাসনকে। সেই সুযোগে এক দল ব্যবসায়ী আলুর বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করলেন। ফলে, আলুর দাম ক্রমাগত বেড়েই গেল, বলে তাঁদের দাবি। বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ বার হিমঘরে আলু রাখার সময়সীমা (৩০ নভেম্বর) বেঁধে দিয়েছিল সরকার। তার পরেও রাজ্যের বহু হিমঘরে আলু থেকে গিয়েছে। তার মধ্যে সরকারি আলুও রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, বিধিনিষেধ সরকার নিজে কতটা মানছে, তা নিয়েও। বর্ধমানে বিজেপির কৃষক নেতা দেবাশিস সরকারের দাবি, ‘‘কয়েকদিন আগে সরকারি আলু হিমঘর থেকে বার করলেই নিলাম করতে হত না।’’ সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য, কৃষক নেতা বিনোদ ঘোষও বলেন, ‘‘সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার জন্যই আলুর দাম বেড়েছে। এখন আবার সরকারি আলু নিলামে তুলতে হল। হিমঘরে মজুত আলুও খোলা বাজারে বিক্রি করতে পারল না সরকার।’’
জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ ইসমাইলের দাবি, ‘‘ঠিক সময়ে বার করা হয়েছিল বলেই বাজারে আলুর দাম কমেছে। সরকারের নির্ধারিত বিক্রিমূল্যের চেয়েও খোলা বাজারে দাম কমেছে। সরকারের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।’’