বিজ্ঞান মেলায়। নিজস্ব চিত্র।
পরপর তিনটি কাউন্টার থেকে বিক্রি হচ্ছে ‘ভূত সব ভয় দেখায়’, ‘ভৌতিক অলৌকিক’ ও ‘সেরা ভূতের গল্প’। এই ছবি কোনও বইমেলা বা শিশু কিশোর সাহিত্য আসরের নয়। এমনটাই দেখা গেল রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান ও সর্বশিক্ষা অভিযানের উদ্যোগে হওয়া জ্ঞান-বিজ্ঞান মেলায়। পড়ুয়াদের মধ্যে বিজ্ঞান প্রসারের লক্ষ্যে বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল বয়েজ হাইস্কুলে দু’দিনের এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে বেশির ভাগ ভুতের বই কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষকেরাই।
সবটা যে খেয়াল রাখা যায়নি তা মেনে নিয়েছেন সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক শ্বারদ্বতী চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘এই মেলা প্রথম বার হচ্ছে। পুরোটাই রাজ্য থেকে ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশৃঙ্খলা, বইয়ের মান সব কিছু থেকেই শিখলাম। পরবর্তীতে বিষয়গুলি খেয়াল রাখা হবে।’’
মঙ্গল ও বুধবার ওই মেলা বিভিন্ন বিজ্ঞান প্রদর্শনীর সঙ্গে ছিল বইমেলা। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল জেলার সমস্ত স্কুলকে। বই কেনার জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকাও বেঁধে দেওয়া হয়। প্রাথমিকের জন্য ৩ হাজার, প্রথম থেকে দশম শ্রেণীর জন্য ১৫ হাজার, দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য ১৫ হাজার টাকার বই কেনার জন্য বলা হয়। মেলার শেষ দিন সকাল থেকেই বই কিনতে ভিড় জমান শিক্ষক শিক্ষিকারা। তাঁদের দাবি, মাত্র তিনটি কাউন্টার থেকে বর্ধমান, কালনা, কাটোয়ার বহু স্কুলের বই কেনা চলছিল। বিশাল লাইনে দাঁড়িয়ে বই মিলছিল। কিন্তু ভিড় এত বেশি যে বই বাছার বা হাতে নিয়ে দেখারও সুযোগ ছিল না। শিক্ষকদের দাবি, বই না দেখিয়ে কার্যত হাতে গুঁজে দেওয়া হয় তাঁদের। পরে তা দেখে হতবাক হয়ে যান শিক্ষক শিক্ষিকারা।
তাঁদের দাবি, বিজ্ঞান মেলায় থেকে তাঁদের স্কুলের পড়ুয়াদের জন্য দেওয়া হয় ভূতের গল্পের বই। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘ভূত সব ভয় দেখায়’, ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধায়ের ভৌতিক অলৌকিক, হাঁদা ভোদা, ছবিতে মজার গল্প— এ সব দেওয়া হয়। ছিল শেক্সপিয়র, ব্রাত্য বসুর দুটি নাটক ও বিভিন্ন উপন্যাসও। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ক্ষোভ, বিজ্ঞান সম্পর্কিত বা পড়ুয়াদের উদ্ধুব্ধ করার মতো মনীষীদের বই দেওয়া হলেও বেশির ভাগই বড়দের উপন্যাস। কেন তাঁদের না দেখিয়ে এই সব বই ভরে দেওয়া হল সেই নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। শিক্ষক বিশ্বজিৎ ঘটক, দেবপ্রিয় চট্টোপাধ্যায়, কিশোর মাকড়েরা বলেন, ‘‘চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে বিজ্ঞান মেলায় এই ভাবে ভূতের বই দেওয়া হবে তা ভাবিনি।’’ কালনা থেকে আগত এক শিক্ষক জানান, তিনি বই ফেরত দেবেন। কৈয়র স্কুলের এক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সুনীল বসাক বলেন, ‘‘আমার স্কুলের পড়ুয়াদের জন্য দেওয়া হয়েছে ‘পেশার দিশা’ বই। এ কি রকম ব্যবস্থা!’’
ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বর্ধমান জেলা বিজ্ঞান মঞ্চের শহর সম্পাদক বিশ্বনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, ভূতের বইগুলির মধ্যে কোনও সামাজিক শিক্ষা আছে কি না দেখতে হবে। যদি তা না হয় তাহলে সেটা দুঃখের। এই মেলায় যুক্তিভিত্তিক বই দেওয়া উচিত ছিল বলেও তাঁর দাবি।