দুর্গাপুর কেমিক্যালস হাইস্কুল। —নিজস্ব চিত্র।
এক সময়ে স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল পাঁচশোর উপরে। বর্তমানে তা নেমে এসেছে মাত্র ১২৭ জনে। এই পরিস্থিতিতে দুর্গাপুর কেমিক্যালস হাইস্কুলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন অভিভাবকদের একাংশ।
১৯৬৩-তে রাজ্য সরকার দুর্গাপুর কেমিক্যালস লিমিটেড (ডিসিএল) কারখানা তৈরি করে। তৈরি হয় কর্মীদের জন্য নিজস্ব টাউনশিপ। টাউনশিপের ছেলেমেয়েরা প্রথম দিকে ডিপিএলের স্কুলে পড়াশোনা করত। পড়ুয়ার সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকায় কারখানা কর্তৃপক্ষ স্কুল চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। শেষমেশ, ১৯৮০-র ৬ ফেব্রুয়ারি চালু হয় স্কুলটি। ১৯৮৪-তে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের স্বীকৃতি পায় স্কুলটি।
২০১৬-য় ডিসিএলের বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য। ২০১৯-এ কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ, তার পরে থেকেই টাউনশিপ এবং স্কুলের দূরবস্থার শুরু। স্কুলে গিয়েও দেখা গিয়েছে, ছাদ ও দেওয়ালের চাঙড় খসে পড়ছে। গ্যারাজের চাল ভাঙা। সেখানেই কোনও রকমে মিড-ডে মিল রান্নার কাজ হয়। অভিভাবকদের আশঙ্কা, পড়ুয়ার সংখ্যা এই ভাবে কমতে থাকলে বাকি পড়ুয়াদের কাছাকাছি স্কুলে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে পারে শিক্ষা দফতর। তখন এই স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দশম শ্রেণির দুই পড়ুয়াও জানাচ্ছে, তারা যখন পঞ্চম শ্রেণিতে এই স্কুলে ভর্তি হয়েছিল, তখনও স্কুলের হাল এমন ছিল না। গত দু’-তিন বছরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
কিন্তু কেন কমছে স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা? মূলত চারটি কারণ উঠে আসছে। প্রথমত, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক জানান, কারখানা বন্ধের পরে স্কুলের পরিকাঠামোগত দূরবস্থা দেখে অনেকেই ছেলেমেয়েদের অন্য স্কুলে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। তাই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে। এই পরিস্থিতিতে স্কুল আর কত দিন চালু থাকবে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। দ্বিতীয়ত, স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে কারখানার শূন্য পদে নিয়োগ না হওয়ায় টাউনশিপে বাসিন্দার সংখ্যা কমতে থাকে। কমতে থাকে ছেলেমেয়ের সংখ্যাও। তৃতীয়ত, আগে সংলগ্ন রাতুড়িয়া, অঙ্গদপুর, আশিসনগর কলোনি প্রভৃতি এলাকা থেকে পড়ুয়ারা এই স্কুলে আসত। কিন্তু দূরত্বগত কারণে এখন অনেকেই অঙ্গদপুর হাইস্কুলে পড়াশোনা করে। চতুর্থত, দুর্গাপুর শহরে ইংরেজিমাধ্যম স্কুলের রমরমার কারণে শহরের অধিকাংশ বাংলামাধ্যম স্কুলেরই পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে। তার ব্যতিক্রম নয় এই স্কুলটিও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, “স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে, এমন একটা গুজব গত কয়েক বছর ধরেই চলছে। তবে তেমন কোনও খবর আমাদের কাছে নেই।” স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক (টিচার ইনচার্জ) ছন্দা রায়ও বলেন, “আশঙ্কা অমূলক। এই ধরনের কোনও ইঙ্গিত আমরা পাইনি।” তাঁর সংযোজন: “আগে স্কুলে শিক্ষকের সমস্যা ছিল। এখন মিটে গিয়েছে। পড়াশোনার বাকি পরিকাঠামোও যথাযথ। অভিভাবকদের বলব, নিশ্চিন্তে ছেলেমেয়েদের এই স্কুলে
ভর্তি করুন।”