আগামি অর্থবর্ষের পরিকল্পনা চলতি মাসের মধ্যে জমা দিতে হবে। অথচ, গত অর্থবর্ষের (২০১৯-২০) উন্নয়নমূলক কাজের ৫০ শতাংশ টাকা খরচ করতে পারেনি জেলার ১১টি পঞ্চায়েত। পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন সূত্রের দাবি, এর খেসারত দিতে হতে পারে জেলাকে। ওই সব পঞ্চায়েতের কোষাগারে টাকা আটকে থাকায় জেলার গড় খরচ দাঁড়িয়ে রয়েছে ৮২.৪৫ শতাংশে। বিজেপির জেলা সাংগঠনিক (বর্ধমান সদর) সন্দীপ নন্দীর দাবি, ‘‘এর থেকেই প্রমাণ, উন্নয়নের কাজের কী অবস্থা!’’
নভেম্বরের শেষে জেলা পরিষদের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি আর্থিক বছরে কোষাগারে পড়ে থাকা টাকার ৫০ শতাংশের নীচে নাম রয়েছে— মেমারি ১ ব্লকের দুর্গাপুর, গলসি ২ ব্লকের সাটিনন্দী, গলসি ১ ব্লকের শিড়রাই, কাটোয়া ১ ব্লকের গোয়াই, কেতুগ্রাম ২ ব্লকের সীতাহাটি, মঙ্গলকোটের লাখুরিয়া, কালনা ২ ব্লকের অকালপৌষ, মেমারি ১ ব্লকের দোলুইবাজার ১, গোপগন্তার ২, নিমো ১ ও জামালপুরের জারগ্রাম।
ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ৬৬টি পঞ্চায়েত ৫০-৮০ শতাংশ পর্যন্ত টাকা খরচ করেছে। আটটি পঞ্চায়েতের কোষাগারে এখনও এক কোটি টাকার বেশি পড়ে রয়েছে। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নসরতপুর (দু’কোটি ৫৮ লক্ষ), মেমারির দুর্গাপুর (এক কোটি ৭১ লক্ষ), জামালপুরের জারগ্রাম (এক কোটি ৫৩ লক্ষ) পঞ্চায়েতের কোষাগারে পড়ে রয়েছে মোটা অঙ্ক। এ ছাড়া, মেমারি ১ ব্লকের দেবীপুর, নিমো ১, গলসির চকতেঁতুল, বর্ধমানের বেলকাশ ও ভাতার পঞ্চায়েতে মোটা টাকা পড়ে আছে।
জেলা পরিষদের এক কর্তার কথায়, ‘‘অনলাইনে তথ্য অনুসারে রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। সে রিপোর্ট অনুযায়ী, নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত পূর্ব বর্ধমানের ২১৫টি পঞ্চায়েত মিলিয়ে ৬০ কোটি টাকা খরচ হয়নি।’’
রিপোর্ট অনুযায়ী, মহকুমা অনুযায়ী গড় খরচে এগিয়ে রয়েছে কালনা (৮৯.৫৬%)। তার পরে রয়েছে বর্ধমান দক্ষিণ (৮১.৭৭%), বর্ধমান উত্তর (৮১.৭৭%)। শেষে রয়েছে কাটোয়া মহকুমা (৭৮.৫৯%)। ব্লকগুলির মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে মেমারি ১। রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, চলতি আর্থিক বছরে পঞ্চায়েতগুলির কোষাগারে এসেছিল ২২০ কোটি টাকা। করোনা-আবহে নানা কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে সেপ্টেম্বরে ৯০ কোটি টাকা রয়েছে বলে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ‘আনলক’ পরিস্থিতিতে কাজের গতি বাড়েনি। অক্টোবর ও নভেম্বরে ১৫ কোটি টাকা করে খরচ হয়েছে। জেলা পরিষদের ওই কর্তার দাবি, “করোনা আবহে লকডাউনের সময় যে সব কাজ চলছিল, তার টাকা পঞ্চায়েত দ্রুত ছেড়ে দিয়েছিল। সে জন্য খরচ বেশি দেখিয়েছে। তার পরেও টাকা পড়ে থাকায় নতুন করে কাজের নকশার অনুমোদন করাতে দেরি হওয়ায়, ফের খরচ আটকে গিয়েছে। আশা করছি, জানুয়ারির মধ্যে গত আর্থিক বছরের টাকা খরচ হয়ে যাবে।’’
এর মধ্যে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা পঞ্চায়েতে এসেছে। পঞ্চায়েতগুলির একাংশ এখনও সে টাকা খরচ করার দিকে এগোতে পারেনি। এর মধ্যে চলতি মাসের মধ্যে আগামি আর্থিক বছরের কাজের পরিকল্পনা জমা দিতে হবে।
পিছিয়ে পড়া পঞ্চায়েতগুলির পক্ষে কি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে? জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ উত্তম সেনগুপ্ত, জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলামদের বক্তব্য, ‘‘খাতায়-কলমে ওই টাকা পড়ে রয়েছে দেখালেও, আসলে পঞ্চায়েতগুলির কোষাগারে তা পড়ে নেই। গ্রামীণ এলাকার মূল কাজ রাস্তা ও পানীয় জল। সে সব কাজ অনেকটাই হচ্ছে।’’ পিছিয়ে থাকা নানা পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষেরও তেমনই দাবি। নসরতপুরের বাসিন্দা তথা পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ বিকাশ বসাকের দাবি, ‘‘প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা ছাড়া সব টাকাই খরচ হয়ে গিয়েছে। ঠিকাদারদের যে পাওনা মেটানো হয়েছে, তা ‘আপডেট’ করতে দেরি হয়ে থাকলে টাকা পড়ে রয়েছে দেখাতে পারে।’’
জেলা পরিষদের সভানেত্রী শম্পা ধাড়ার কথায়, ‘‘ওই পঞ্চায়েতগুলিকে নিয়ে বৈঠক করব। তারা যাতে ঠিক পথে এগোয়, সে দিশা দেওয়া হবে।’’