উদ্ধার করা হচ্ছে আসানসোলে ভেসে যাওয়া গাড়ি। নিজস্ব চিত্র।
জল নেমে গেলেও শনিবারও ব্যবহারের উপযোগী হয়নি অন্ডালের কাজী নজরুল ইসলাম বিমানবন্দর। এ দিনও সব উড়ান বাতিল করা হয়। কর্তৃপক্ষের দাবি, বিমানবন্দর উড়ানের জন্য উপযুক্ত করে তোলা যে যায়নি, তা সময়ে বেসরকারি বিমান পরিষেবা সংস্থাকে জানিয়ে দেওয়া হয়। আজ, রবিবার বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ ও দিল্লির উড়ান রয়েছে। নতুন করে জল জমার পরিস্থিতি তৈরি না হলে সম্ভবত আজ থেকে পরিষেবা স্বাভাবিক হবে বলে বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে। এরই মধ্যে শুক্রবার বৃষ্টির মধ্যে আসানসোলে গাড়ি-সহ ভেসে যাওয়া চঞ্চল বিশ্বাস (৫৯), গৌতম রায় (৩৯) ও রোহিত রায় (৩০) নামে তিন জনের শনিবার দেহ মেলে।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, টানা বৃষ্টির জেরে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে অন্ডাল বিমাননগরী। রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, টারম্যাক, টার্মিনাল সর্বত্র জলে ভর্তি। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার একটি বেসরকারি সংস্থার তিনটি উড়ানই বাতিল করা হয়। শনিবার ওই সংস্থার চেন্নাই, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ ও দিল্লির উড়ান ছিল। চেন্নাই থেকে এসে প্রথম বিমান নামার কথা ছিল সকাল ৮টা ২৫ নাগাদ। সেটি-সহ পর পর উড়ান বাতিল করতে হয়। দুপুর দেড়টায় বেঙ্গালুরু উড়ান ধরতে কয়েক জন যাত্রী পৌঁছে যান বিমানবন্দরে। তাঁদের আটকে দেন নিরাপত্তারক্ষীরা। যাত্রীদের দাবি, তাঁদের কাছে বিমান সংস্থার তরফে উড়ান বাতিলের কোনও বার্তা দেওয়া হয়নি। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তরফেও বিকল্প উড়ান সম্পর্কে জানানো হয়নি। বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, বিকল্প
উড়ানের ব্যবস্থা করার বিষয়টি তাঁদের এক্তিয়ার নয়।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, আবর্জনা, পলি তৎপরতার সঙ্গে পরিষ্কার করে তা ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করছেন কর্মীরা। বিমানবন্দরের ডিরেক্টর কৈলাস মণ্ডল বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব উড়ান চালু করার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিমান পরিষেবা সংস্থাকে সময়ে সময়ে পরিস্থিতির কথা জানানো হচ্ছে।”
একটি সংস্থার আধিকারিক চঞ্চল গাড়ি-সহ ভেসে যান বাড়ি ফেরার পথে। শনিবার স্বামীর দেহ উদ্ধারের খবরে বার বার জ্ঞান হারান তাঁর স্ত্রী, স্কুল শিক্ষিকা অনিতা বিশ্বাস। পরিজনদের দাবি, বাড়ি ফেরার জন্য চঞ্চল আগে ওই সেতু পারাপার করেননি। কাল্লার কাছে গাড়ুই নদী থেকে রোহিতের ও ইসিএলের আধিকারিক গৌতমের দেহ কালিপাহাড়ি রেল টানেল থেকে উদ্ধার হয়। আসানসোল জেলা হাসপাতালে দেহ শনাক্ত করেন মৃতের মা লক্ষ্মী রায়। গৌতমের স্ত্রী ও ছেলে লখনউয়ে থাকেন। তাঁরা আসানসোল রওনা হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
শনিবার ভারী বৃষ্টি না নামায় সমস্ত বাস পথে নামে বলে জানান আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায় ও বড় বাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মুখোপাধ্যায়। তবে গাড়ুই নদীতে জলের পরিমাণ বেশি থাকলেও তবে ভয়াল রূপ ছিল না এ দিন। আসানসোল পুরসভা সাফাই ও নিকাশির কাজ শুরু করেছে। অনেকেই ত্রাণ শিবির থেকে বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন। মেয়র বিধান উপাধ্যায় বলেন, “পুরপ্রতিনিধিদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পুর-আধিকারিক ও সাফাই নিকাশি দফতরের কর্মীদের ছুটি আপাতত বাতিল করা হয়েছে।”