পারুর পুকুরের মরা মাছ। —নিজস্ব চিত্র।
শখে মানুষ কত কী করেন! কারও শখ বাগানের। কেউ ফাঁকা সময় পেলেই ছিপ নিয়ে মাছ ধরতে চান। তবে পূর্ব বর্ধমানের গলিগ্রামের পারু চৌধুরীর শখ একটা অন্য রকম। তিনি শখের মাছচাষি। মাছ ছাড়েন। খাবার দেন। বড় করেন। কিন্তু মাছ তিনি ধরে খান না। ব্যবসাও করেন না। সেই পুকুরে বিষাক্ত জল ঢুকে মারা গেল অসংখ্য মাছ। এ নিয়ে শোরগোল এলাকায়। পারুর অভিযোগ, দু’টি কারখানার বর্জ্য এবং দূষিত জল ধান জমি হয়ে তাঁর পুকুরে ঢুকে সব মাছ মেরে ফেলেছে। এমন ঘটনায় পারুর পাশে দাঁড়িয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন প্রতিবেশীরাও। যদিও অভিযুক্তদের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
গলিগ্রামে একটি বড় পুকুর রয়েছে পারুর। সেখানে শখ করে তিনি মাছ চাষ করেন। এলাকাবাসী পারুর এই শখ সম্পর্কে সচেতন। তাঁরা জানাচ্ছেন, পুকুরের মাছ কখনও বিক্রিও করেন না পারু। কিন্তু হঠাৎ একের পর এক মাছ মরা শুরু হয়েছে। শখ করে চাষ করা পুকুরে বিষাক্ত জল ঢুকে কয়েক কুইন্টাল বড় বড় সাইজের মাছ মারা গিয়েছে বলে অভিযোগ করলেন পারু।। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পুকুরের একটু দূরে দু’টি কারখানা আছে। সেখানকার বর্জ্য, দূষিত জল ধান জমি হয়ে পুকুরে ঢুকেছে। ফলে জল দুষিত হয়ে কয়েক কুইন্টাল মাছ মারা গিয়েছে।’’ তাঁর দাবি, সব মিলিয়ে প্রায় তিন লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পুকুরে ছিল দেশি রুই, কাতলা, সিলভার কার্প ইত্যাদি মাছ। পারুর প্রতিবেশী শেখ চাঁদের মন্তব্য, ‘‘এ ব্যাপারে ব্যবস্থা না নিলে আরও ক্ষতি হতে পারে।’’
স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, নালা বেয়ে মিলের দূষিত জল পাশের সেচ খালে পড়ছে। বুধ এবং বৃহস্পতিবার বৃষ্টি হওয়ায় ওই বিষাক্ত জল নালা ছাপিয়ে চাষের জমি হয়ে পুকুরে ঢুকে যায়। শুক্রবার সকাল থেকেই বড় বড় মাপের মাছ পুকুরে ভেসে উঠতে দেখা যায়। তাঁদের অভিযোগ, কারখানার খারাপ জলের কারণে নালা-সহ সেচ খালের জল পচে দুর্গন্ধ বার হচ্ছে। জলের রং কালো হয়ে গিয়েছে। পচা জলের কারণে বেশ কিছু কৃষি জমির ধানও নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে কারখানা এবং প্রশাসন কারও কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই।
অন্য দিকে, মাছ মরার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় গলসি থানার পুলিশ। পুলিশ আধিকারিকরা গিয়ে পুকুর এবং কারখানার আশপাশ পরিদর্শন করেন। এখন পুকুরের বেঁচে থাকা বাকি থাকা বাঁচাতে দু’তিনটি পাম্প চালিয়ে ও বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে জল পরিশোধনের চেষ্টা করছেন পুকুর মালিক।