আপাতত তুলে রাখা হয়েছে জাল-নৌকা। নিজস্ব চিত্র
তাঁদের সারা বছরের জীবিকা দামোদর ব্যারাজের উপরেই নির্ভর করে থাকে। কিন্তু হঠাৎই লকগেটে বিপর্যয়ের জেরে বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। ব্যারাজের জলের সঙ্গে সব মাছ বেরিয়ে গিয়েছে। এখন আগামী বেশ কিছু দিন কী ভাবে দিন চলবে, তা নিয়ে চিন্তায় দুর্গাপুর ব্যারাজ লাগোয়া মৎস্যজীবীরা। যদিও পুরসভার তরফে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
শনিবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ দুর্গাপুর ব্যারাজের ৩১ নম্বর লকগেটটি ভেঙে যায়। ফলে, ব্যারাজে থাকা জল হু-হু করে বেরিয়ে যেতে শুরু করে। রবিবার থেকেই ব্যারাজের বেশিরভাগ অংশ জলশূন্য হয়ে পড়েছে। জল শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে মাছ ধরার হিড়িক পড়ে যায়। অনেক সাধারণ মানুষও কম জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েন। কিন্তু ব্যারাজের জল শুকিয়ে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে মৎস্যজীবীদের। কারণ, বহু মৎস্যজীবী দামোদর ব্যারাজে মাছ ধরে সারা বছর রোজগার করেন। তাঁরা জানান, দুর্গাপুর পুরসভার ৩৮, ৩৯ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় তিন হাজার মানুষ রয়েছেন, যাঁরা এই পেশায় যুক্ত।
আশিসনগর, বিদ্যাসাগরপল্লি, নতুনপল্লির মতো এলাকার বহু মৎস্যজীবীর অভিযোগ, লকগেট ভাঙার পর থেকেই ব্যারাজে নেমে বহু মানুষ মাছ ধরতে শুরু করেন। সোমবার পর্যন্ত মাছও ভাল মিলেছে। কিন্তু বাজারে মাছের জোগান বেড়ে যাওয়ায় দাম তেমন মেলেনি। দুর্গাপুরের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের মাছ ডিপো এলাকায় প্রায় ৫০টি মৎস্যজীবী পরিবারের বাস। তাঁরা জাল শুকিয়ে বাড়িতে রাখার তোড়জোড় শুরু করছেন। বরহম দেওসাহানি, নিখিলেশ সাহানি, শত্রুঘ্ন সাহানিরা জানান, ব্যারাজে বছরভর রুই, কাতলা, আড়, বোয়াল-সহ বিভিন্ন ধরনের মাছ সারা বছর পাওয়া যায়। কিন্তু এ বার আর তা মিলবে না। তাঁরা বলেন, ‘‘এখন সারা বছর কী করে চলবে, এ নিয়েই চিন্তায় আছি।’’
মৎস্যজীবীরা আরও জানান, প্রতি বছর সরকারের তরফে ব্যারাজে মাছের চারা ছাড়া হয়। সে সব মাছ ধরেই সংসার চলে তাঁদের। আশিসনগরের সজল বিশ্বাস, গৌতম বিশ্বাসেরা বলেন, ‘‘এ বছর করোনার জেরে এমনিতেই রোজগার ভাল হয়নি। তার উপরে লকগেট-বিপর্যয়। এখন কী করে চলবে, বুঝে উঠতে পারছি না!’’ তাঁরা আরও জানান, ২০১৭ সালেও একটি লকগেট ভেঙে বিপত্তি হয়েছিল। সে বার মৎস্যজীবীরা মহকুমাশাসককে চিঠি দিয়ে মাছ ছাড়ার আর্জি জানান। তাতে সাড়া মিলেছিল।
শহরের সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায়সরকার বলেন, ‘‘দামোদর ব্যারাজের উপরে নির্ভরশীল প্রায় তিন হাজার মৎস্যজীবী রয়েছেন। তাঁদের জীবন-জীবিকা সঙ্কটে। এ সময়ে তাঁদের দেখভালের দায়িত্ব রাজ্য সরকারকে নিতে হবে।’’ পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর তথা ৪ নম্বর বরো চেয়ারম্যান চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুরসভার তরফে সব সময়েই মৎস্যজীবীদের পাশে থাকা হয়। উদ্বেগের কিছু নেই। সরকারের সঙ্গে কথা বলা হবে।’’ জেলার মৎস্য দফতরেরে এক আধিকারিক জানান, ‘মৎস্য সঞ্চার’ প্রকল্পে প্রতি বছরই দুর্গাপুর ব্যারাজে মাছের চারা ছাড়া হয়। সে পরিকল্পনা নেওয়া হবে।