প্রতিষেধক নিলেন ৩২৬ জন
COVID-19

আগে ডাক্তার নিন, দাবি আশাকর্মীদের

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে জেলায় ১৯ হাজার প্রতিষেধক এসেছে। প্রাথমিক ভাবে সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্তদেরকেই প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ০২:৩০
Share:

আশাকর্মীদের ক্ষোভের পরে প্রতিষেধক নিচ্ছেন চিকিৎসক, সালানপুরের পিঠাইকেয়ারিতে। নিজস্ব চিত্র।

জেলায় শনিবার প্রথম দিন নির্বিঘ্নেই শেষ হল করোনার প্রতিষেধক নেওয়ার প্রক্রিয়া, এমনই দাবি করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও জেলা প্রশাসন। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, জেলার যে ছ’টি কেন্দ্র থেকে প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছিল, বেশকয়েকটি কেন্দ্রে একশো শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। আবার অনেকে প্রথমে প্রতিষেধক নিতে অস্বীকারও করেন। পরে চিকিৎসক ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা বোঝানোয় তাঁরা প্রতিষেধক নেন।

Advertisement

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এ দিন ৬০০ জনের মধ্যে মোট ৩২৬ জন প্রতিষেধক নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সব দিক দেখে আমাদের মনে হয়েছে, প্রথম প্রথম প্রতিষেধক নেওয়া ঠিক হবে কিনা, মনের এই ‘দ্বন্দ্ব’ থেকে এ দিন অনেকে প্রতিষেধক নিতে আসেননি। পরের দিনগুলিতে এই সমস্যা দূর করা যাবে বলে আমরা আশবাদী।’’ সিএমওএইচ অশ্বিনীকুমার মাজি বলেন, ‘‘কেন কম হল খোঁজ নেওয়া হবে।’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে জেলায় ১৯ হাজার প্রতিষেধক এসেছে। প্রাথমিক ভাবে সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্তদেরকেই প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য ১৬ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে আসানসোল ও দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয় পর্যায়ে এই দুই হাসপাতাল থেকে প্রতিষেধক প্রয়োগ করা হবে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলাশাসক বলেন, ‘‘আগামী দিনেও কর্মসূচি সফল হবে বলে আশা করি।’’ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ফের প্রতিষেধক দেওয়া হবে সোমবার। সপ্তাহে চারদিন সোম, মঙ্গল, শুক্র ও শনিবার কর্মসূচি হবে। সব দিনই একশো জনকে দেওয়া হবে।

Advertisement

শনিবার বেলা ১১টা থেকে প্রতিষেধক দেওয়ার শুরু করার কথা ছিল। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কিন্তু প্রায় সর্বত্রই সামান্য দেরি করেই কাজ শুরু হয়। এ দিন সালানপুরের পিঠাইকেয়ারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিষেধক নেওয়ার প্রথম দলটিতে দশ জন আশাকর্মীকে ‘ওয়েটিংরুমে’ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু তাঁরা বেঁকে বসেন। জানিয়ে দেন, একজন চিকিৎসককে প্রথমে প্রতিষেধক নিতে হবে। তবেই তাঁরা নেবেন। অনেক বোঝানোর পরেও নিজেদের দাবিতে অনড় থাকেন। শেষমেশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক অমরেশ মাজি প্রথম প্রতিষেধক নেন। ‘ভয়’ দূর হওয়ায় আশাকর্মীরা প্রতিষেধক নেন। তাঁরা বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম আগে কোনও চিকিৎসক প্রতিষেধক নিন। তার পরে দেখে আমরা নেব। সেই মতো নিয়েছি।’’ অমরেশবাবু বলেন, ‘‘অযথা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটি অন্য প্রতিষেধকের মতোই। কোনওরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি।’’ বিএমওএইচ সুব্রত সীট বলেন, ‘‘প্রথমে আশাকর্মীরা নিতে চাননি। পরে সকলেই নিয়েছেন।’’

এ দিকে, দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের সৃজনী প্রেক্ষাগৃহ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলাশাসক ময়ূরী ভাসু, মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) অর্ঘ্যপ্রসূন কাজী, দুর্গাপুর পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) রাখি তিওয়ারি। শিবিরের তদারকি করেন সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কেকা মুখোপাধ্যায়। এই কেন্দ্রে প্রথমে ৫৪ জন প্রতিষেধক নেন। পরে আরও কয়েকজন আসেন। কিন্তু ১০ জন না হওয়ায় তাঁদের ফিরিয়ে দিতে হয়। কারণ, একটি ফাইলে দশ জনকে দেওয়া যায়। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) রাখিদেবী বলেন, ‘‘এ দিন বেশিরভাগই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই এ দিন আসেননি। সকলকে এসএমএস পাঠানো হয়েছিল। কেন আসেননি খোঁজ নিতে হবে।’’ একই ছবি ধরা পড়েছে পানাগড়, জামুড়িয়ায়ও। পানাগড়ে ৫৮ জনের মধ্যে ৫১ জনকে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র সূত্রের খবর, বাকি সাত জনের শারীরিক নানা সমস্যা থাকায় প্রতিষেধক দেওয়া যায়নি। জামুড়িয়ায় ৫৮ জন প্রতিষেধক নিয়েছেন। সব থেকে কম জন নিয়েছেন দিলদারনগরে। মাত্র ২০ জন। তবে রানিগঞ্জের কেন্দ্রে ৯৯ জন প্রতিষেধক নিতে এসেছিলেন বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের জানা গিয়েছে।

এ দিন আসানসোলের দিলদারনগরে পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সকালে উপস্থিত হন পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রশাসক বোর্ডের সদস্য দিব্যেন্দু ভগত। এ দিন তাঁর জন্মদিন। প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মীরা কেক কেটে তাঁকে অভিনন্দন জানান। এর পরে তিনি প্রথম প্রতিষেধক নেন। দিব্যেন্দুবাবু বলেন, ‘‘করোনার সময়ে অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে ময়দানে নেমে কাজ করেছি। তা ছাড়া, অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ভরসা জোগাতেই নিজে প্রথম প্রতিষেধক নিয়েছি।’’ দিলদারনগরে ছিলেন পুর-কমিশনার নীতীন সিংঘানিয়া।

যাঁরা প্রতিষেধক নিয়েছেন তাঁদের অভিনন্দন জানিয়েছেন জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজি ও সিএমওএইচ অশ্বিনীকুমার মাজি থেকে পুরসভার কর্তাব্যক্তিরাও। সিএমওএইচ বলেন, ‘‘কোথাও কোনও সমস্যা হয়নি। নির্বিঘ্নে শেষ হয়েছে কর্মসূচি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement