জঙ্গলের আগুন নেভাচ্ছেন এক কর্মী। নিজস্ব চিত্র।
ফের আগুন লাগল পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের আদুরিয়ার জঙ্গলে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার আউশগ্রামের ভেলাডাঙার কাছে গভীর জঙ্গলে আগুন লাগে। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ সে খবর পান তাঁরা। আড়াইটে নাগাদ প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ২০ হেক্টর এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে বলে দাবি বন দফতরের এক কর্তার। বর্ধমানের বনাধিকারিক নিশা গোস্বামী বলেন, ‘‘আগের সপ্তাহ জুড়ে পর পর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও মাঝে তা আটকানো গিয়েছিল। অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের জন্য ফের এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে লাগাচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে আমরা নজরদারি চালাচ্ছি। ধরতে পারলে, উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ জঙ্গল লাগোয়া এলাকার সাধারণ মানুষকে এ ব্যাপারে আরও সচেতন হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
বনকর্মীদের দাবি, দুর্ঘটনাবশত জঙ্গলে আগুন লাগলে, সাধারণত রাস্তার ধারে প্রথমে আগুন লাগে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে গভীর জঙ্গলে বার বার আগুন লাগছে। এক সঙ্গে দু’-তিনটি জায়গা থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। বনকর্মীদের অনুমান, ইচ্ছাকৃত ভাবে আগুন লাগানো হচ্ছে। গত এক মাসে পাঁচ-ছ’বার আগুন লেগেছে বনে। জঙ্গল রক্ষা করতে বার বার প্রচার চালিয়েছে বন দফতর। শিকার বন্ধেও উদ্যোগ করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও কেন ওই ঘটনা ঘটছে, চিন্তায় বন-কর্তারা। আদুরিয়ার জঙ্গলে ময়ূর, প্যাঙ্গোলিন, খরগোশ, বনবিড়াল, ময়ালের মত বিভিন্ন ধরণের বন্যপ্রাণী রয়েছে। আগুনে তাদের জীবনহানির আশঙ্কা রয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত বন্যপ্রাণীদের কোনও ক্ষতি হয়নি, দাবি বন দফতরের।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গলে আগুন লাগার ঘটনা রুখতে ‘ফায়ার ওয়াচার’ রাখা হয়েছে। এ দিন তাঁদের নজরেই আসে আগুন। বিট অফিসার আসরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে জনা ১৫ বনকর্মী সেখানে পৌঁছন। তাঁদের মধ্যে রাজা হেমব্রম, দেউল বাগদি, অভিজিৎ দলুই, বৈদ্যনাথ টুডুদের দাবি, আগুন নেভাতে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। শুকনো পাতার সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। গভীর জঙ্গলে পৌঁছতেও বেশ কিছুটা সময় চলে যায়। তাঁদের দাবি, এ দিন আগুনের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে ‘ফায়ার ব্লোয়ার’ দিয়েও তা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। পাশাপাশি, এ দিন তাপমাত্রা প্রায় ৪৩ ডিগ্রির কাছাকাছি ছিল। আগুনের জেরে জঙ্গলে তাপমাত্রা আরও বেড়ে যায়। আগুন থেকে ১০-১৫ ফুট দূরে তাপমাত্রা ছিল প্রায় ৫৫ ডিগ্রি, দাবি তাঁদের। তাপে বনকর্মীদের শরীর জ্বলতে থাকে, কয়েকজনের শ্বাসকষ্ট শুরু হয় বলে জানা গিয়েছে। পরে, পানাগড় থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন সেখানে আসে। এক বনকর্মী বলেন, ‘‘যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় সমস্যায় পড়তে হয় দমকলকেও। তবে প্রাথমিক ভাবে বনকর্মীরাই আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনেন।’’
বন্যপ্রাণীদের চোরা শিকার ও জঙ্গলে আগুন লাগানো রোধে এ দিন আউশগ্রাম বিটের অধীনস্থ আলেফনগর, রামচন্দ্রপুর, পূর্বতটি, মিরশা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রচার চালান বনকর্মীরা। সঙ্গে ছিলেন আউশগ্রামের বিট অফিসার হিমাংশু মণ্ডল।