নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বৌমার বিয়ে দিলেন বৃদ্ধ। —নিজস্ব চিত্র।
একমাত্র ছেলের মৃত্যু হয়েছে অকালে। সাপের কামড়়ে তিনি গত হন বছর খানেক আগে। তার পর থেকে বৌমা এবং নাতনির যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছিলেন কিশোর চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু নিজের বয়স হয়েছে। বৌমা এবং নাতনির ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাই পুত্রবধূকে পাত্রস্থ করলেন পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়ার বৃদ্ধ কিশোর চট্টোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার চারহাত এক হল পূজা চট্টোপাধ্যায় এবং প্রভাত ফৌজদারের।
জামুড়িয়ার চিঁচুড়িয়া এলাকার বাসিন্দা কিশোর চট্টোপাধ্যায়। তাঁর একমাত্র পুত্র ইন্দ্রজিতের বিয়ে দিয়েছিলেন কয়েক বছর আগে। ছেলে-বৌমা-নাতনিকে নিয়ে বেশ দিন কাটছিল। কিন্তু আচমকা ছন্দপতন। বিয়ের ২ বছরের মধ্যে সাপের কামড়ে মারা যান ইন্দ্রজিৎ। তার পর থেকে একমাত্র কন্যাসন্তানকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন পূজা।
কিন্তু পুত্রবধূ এবং নাতনির ভবিষ্যতের কথা ভেবে পূজার পুনরায় বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবেন কিশোর। শুরু করেন পাত্র দেখা। শেষে পাত্র হিসাবে কিশোর যাঁকে পেলেন তিনি ছেলেরই ছোটবেলার বন্ধু। তাঁর পরিবারকেও চেনেন কিশোর। ভাবেন, এখানে বৌমা গেলে ভালই থাকবেন। সম্বন্ধ নিয়ে তিনি হাজির হন চিঁচুড়িয়ার গ্রামেরই বাসিন্দা প্রভাত ফৌজদারের বাড়িতে। কিশোরের প্রস্তাব মেনে নেন প্রভাতের পরিবারের সকলে।
অবশেষে দুই পরিবারের উপস্থিতিতে শুক্রবার আসানসোল ঘাগরবুড়ি মন্দিরে প্রভাত-পূজার বিয়ে হল। দুই পরিবারের আত্মীয়-পরিজনেরা এসে নবদম্পতিকে আশীর্বাদ করেন। পাশাপাশি শ্বশুর কিশোর এবং পাত্র প্রভাতের ভূয়সী প্রশংসা করেন সবাই। বিয়েতে উপস্থিত স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান বিশ্বনাথ সাঙ্গুই এবং পঞ্চায়েত সদস্য অমিতকুমার চক্রবর্তী কিশোরের উদ্যোগকে কুর্নিশ জানান।
ওই বৃদ্ধের কথায়, ‘‘আমার একমাত্র ছেলে ছিল ইন্দ্রজিৎ। সাপের কামড়ে ওর মৃত্যুর পর পুত্রবধূকে কন্যাস্নেহে লালনপালন করেছি। পরে আমি স্থির করলাম ওর বিয়ে দেব। আমাদের আর ক’দিন। বৌমা যাতে ভাল থাকে তার জন্য ওর জন্য পাত্র দেখা শুরু করি।’’
পাত্র প্রভাতের কথায়, ‘‘আমার কাছে এই প্রস্তাব আসার সঙ্গে সঙ্গে বিয়েতে রাজি হই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আসলে যাকে বিয়ে করছি, সে আমার বন্ধুরই বৌ। আমি বন্ধুর সন্তানের দায়িত্ব নেব। ভাল রাখব দু’জনকে।’’