Stubble Burning

বিকল্প পথে সময় বেশি, বিষ-বাষ্পই কি ভবিতব্য?

সম্প্রতি জেলাস্তরে একটি বৈঠকে জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজি কৃষি ও ভূমি দফতরকে যৌথ ভাবে কারা নাড়া পোড়াচ্ছেন, সেই সমীক্ষা করতে নির্দেশ দেন।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৫০
Share:

নাড়া পোড়ানো চলছেই, গলসির মিঠাপুরে। ছবি: কাজল মির্জা

বিকল্প পথে সময় বেশি, বিষ-বাষ্পই কি ভবিতব্য?

Advertisement

কয়েক বছর আগেও পরিস্থিতি এমন ছিল না। গ্রামেগঞ্জে বাড়ির ছাউনি তৈরি থেকে নানা কাজে খড়ের চাহিদা ছিল। কিন্তু বর্তমানে গোপালনের সঙ্গে খড়ের চাহিদাও কমেছে। বাড়ছে ধান কাটার মজুরের অভাব। বাড়ছে যন্ত্রের ব্যবহার। সেই কারণেই হরিয়ানা, দিল্লির সঙ্গে নাড়া পোড়ানোর দূষণে এক মাত্রায় চলে এসেছে পূর্ব বর্ধমানও।

নাড়া পোড়ানোর বিকল্প উপায় নিয়ে আলোচনা চলছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। তবে চাষি থেকে সাধারণ মানুষের দাবি, কৃষি দফতর ধান কাটার মরসুমে দু’একটা বৈঠক করে সচেতন করতে উদ্যোগী হয়। বিভিন্ন জায়গায় ‘নাড়া পোড়াবেন না’ বলে ব্যানার, ফ্লেক্স টাঙানো হয়। কিন্তু নাড়া না পোড়ালে কী হবে, তার বিকল্প দিশা দেখাতে পারে না। কম সময়ের মধ্যে নাড়া কী ভাবে জৈব সারে পরিণত হবে, সেই হদিশও মেলে না। ফলে, বৈঠকগুলি কার্যত নিষ্ফলায় পরিণত হয়। বৈঠক সেরে চাষিরা আবার নাড়াতেই আগুন লাগান।

Advertisement

সম্প্রতি জেলাস্তরে একটি বৈঠকে জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজি কৃষি ও ভূমি দফতরকে যৌথ ভাবে কারা নাড়া পোড়াচ্ছেন, সেই সমীক্ষা করতে নির্দেশ দেন। তিনি সেখানে বলেন, “যে সব জমিতে নাড়া পোড়ানো হয়েছে, তা দেখলেই বোঝা যাবে। ভূমি দফতরের কাছে সেই তথ্য আছে। তা দিয়ে জমির মালিক বা চাষিকে সতর্ক করতেই পারে কৃষি দফতর। একই সঙ্গে সেই চাষিকে নজরদারির মধ্যেও রাখা যেতে পারে।”

কৃষি দফতরের দাবি, নাড়াকে জৈব সারে পরিণত করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চাষিদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি মেমারির করন্দা গ্রামে চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয় বর্ধমান ২ ব্লক কৃষি দফতর। সেখানে জানানো হয়, ‘মালচার’ যন্ত্রের সাহায্যে নাড়া কেটে নষ্ট করা হবে, পড়ে থাকা খড় এক জায়গায় জড়ো করে গোবর-জল দিয়ে ভিজিয়ে রাখার কিছুক্ষণের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট ওষুধ (বায়ো ডিকম্পোজ়ার), নির্দিষ্ট মাত্রায় ছড়িয়ে দেওয়ার ৩০ থেকে ৩৮ দিনে মধ্যে জৈব সারে পরিণত হবে তা।

এ ছাড়াও আগুন আর জমির মধ্যে ফারাক গড়ে দিতে পারত ক্যাপসুল বা ‘পুসা ডিকম্পোজ়ারাস’। জাতীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তৈরি ওই ক্যাপসুল গুড়, জল ও ছাতুর সঙ্গে মিশিয়ে জমিতে দিলে নাড়া পচে জৈব সারে পরিণত হবে। সে ক্ষেত্রেও সময় লাগবে অন্তত ২৫ দিন। কৃষি দফতরের দাবি, ওই ক্যাপসুল কার্যত কোনও কাজেই লাগছিল না। তা ছাড়া ক্যাপসুল অমিলও।

পূর্ব বর্ধমান রাজ্যের শস্যগোলা বলে পরিচিত। ধান উৎপাদনের সঙ্গে আলু, সর্ষে, তিল জাতীয় ফসলেরও উৎপাদন ভাল হয়। বেশির ভাগ জমিতেই তিন ফসলের চাষ হয়। সেই কারণে ধান তোলার পরে কুড়ি দিন চাষিদের কাছে অনেকটা সময়। আলু বা সর্ষের জন্য চাষিরা ওই সময়টা ফেলে রাখতে পারবেন না। ফলে নাড়া পোড়ানোর মতো বিপজ্জনক প্রবণতা কী ভাবে রোখা যাবে, সেটা চিন্তার।

জানা যায়, এক কুইন্টাল খড় পোড়ালে ১৪৬০ কেজি কার্বন-ডাই অক্সাইড, ৬০ কেজি কার্বন মনোক্সাইড, ২ কেজি সালফার-ডাই অক্সাইড তৈরি হয়। এ ছাড়াও মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড পাওয়া যায়। সবগুলিই পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকারক। তাহলে কী কালো ধোঁয়ায় ভবিতব্য?

রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা, পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “মানুষকে বোঝানো হচ্ছে। বিকল্প ব্যবস্থায় চাষিরা এগিয়ে আসছেন না। জোর করে কিছু করতে চাইছি না। কম সময়ের মধ্যে কী ভাবে বিকল্প ব্যবস্থা করা যায় তার জন্যে গবেষণা চলছে।”

(তথ্য সহায়তা: প্রদীপ মুখোপাধ্যায় ও জয়ন্ত বিশ্বাস)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement