এক পক্ষ পরপর মাঠে নামাচ্ছে নামী নেতাদের। আর এক দল তাক লাগাচ্ছে তারকাদের এনে। বিজেপি এবং তৃণমূলের ভোট প্রচারের এমন কৌশলের মাঝে অবশ্য সিপিএম আস্থা রাখছে স্থানীয় নেতাদের উপরেই। যা দেখে শাসক দলের নেতাদের কটাক্ষ, ‘‘বড় নেতাদের এনে লাভ নেই, বুঝে গিয়েছে বামেরা।’’ সিপিএম নেতাদের পাল্টা প্রতিক্রিয়া, ‘‘সারা বছর পড়াশোনা করলে পরীক্ষার আগে রাত জাগার দরকার হয় না।’’
গত লোকসভা ভোটে এই শিল্পাঞ্চলে ভাল ফল করেছিল বিজেপি। সে বারের মোদী-হাওয়া অবশ্য এই ভোটে নেই। তবু প্রচারে খামতি রাখছেন না বিজেপি নেতারা। ইতিমধ্যে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের নানা কেন্দ্রে তাদের সভায় এসেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, উমা ভারতী, পীযূষ গয়াল ও নরেন্দ্র সিংহ তোমর। তৃণমূলের প্রচারে এসেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সীরা। তৃণমূল প্রার্থীদের সমর্থনে রোড-শো করেছেন অভিনেতা হিরণ, পায়েল, শুভশ্রী। কংগ্রেসের সভায় এসেছেন রাহুল গাঁধী। কিন্তু, সিপিএমের একমাত্র সূর্যকান্ত মিশ্রই এসেছেন এই এলাকায় প্রচারে, তা-ও সভা করেছেন শহরের বাইরে কাঁকসা, লাউদোহায়।
যদিও অন্য সব দলের ‘হেভিওয়েট’ নেতাদের প্রচার নিয়ে মাথাব্যথা নেই বলে দাবি সিপিএম নেতাদের। তাঁরা জানান, দুর্গাপুরে শাসক দলের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন চলছে মে মাস থেকে। পুরসভার বেহাল পরিষেবার অভিযোগে ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়। ‘রক্ষা করো আমার শহর’ স্লোগান তুলে আন্দোলনে নামা হয়। পুরসভার পরিষেবা নিয়ে লিখিত মতামত চেয়ে বাড়ি-বাড়ি প্রশ্নপত্র বিলি করে সিপিএম। নেতাদের দাবি, তাতে ভাল সাড়া মেলে। মুচিপাড়া থেকে বার্নপুর পর্যন্ত ‘শিল্পের জন্য হাঁটুন’ পদযাত্রাও সফল হয়। দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টে প্রতিনিধি শ্রমিক সংগঠন নির্বাচনে সিটু জয়ী হয়।
মাস চারেক আগে শহরের ফুলঝোড়ে সভা করেন রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবু। তাঁর পরামর্শ মতো শহরের সিপিএম নেতারা পাড়ায়-পাড়ায় সভা করতে শুরু করেন। তার ফল মিলতে শুরু করেছে বলে দাবি নেতাদের। মাস দুয়েক আগে বিওজিএল এলাকায় সিটুর একটি অফিস তৃণমূলের নাম করে কয়েক জন দখল করার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তা সিপিএম পুনর্দখল করে। বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থীর সমর্থনে রাহুল গাঁধীর সভায় যে ভিড় হয়েছিল, তা-ও তাঁদের সংগঠন মজবুত হওয়ার অন্যতম প্রমাণ বলে সিপিএমের একাংশের দাবি।
সিপিএমের একটি সূত্রের দাবি, কোনও বড় নেতার সভা সফল করতে ন্যূনতম চার-পাঁচ দিনের প্রস্তুতি প্রয়োজন। সেই সময় সাধারণ প্রচারসূচি বিঘ্নিত হয়। শহরের এক সিপিএম নেতা বলেন, ‘‘হাতে সময় বেশি নেই। যতটুকু আছে, তা কাজে লাগিয়ে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালিয়ে নেওয়া অনেক বেশি জরুরি বলে আমরা মনে করছি।’’ সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বুথে ২০-২৫ জনের ‘বুথ সংগ্রাম কমিটি’ গড়ার প্রস্তুতি চলছে। দলের এক নেতা বলেন, ‘‘আমাদের একটাই লক্ষ্য, মানুষ যেন নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন।’’
বাম ও কংগ্রেস নেতাদের দাবি, দুর্গাপুর পশ্চিমে তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে বিশ্বনাথ পাড়িয়াল তৃণমূল প্রার্থী অপূর্ব মুখোপাধ্যায়কে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছেন। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, ৩৮ বছর পরে গত ১ এপ্রিল থেকে প্রায় ৩ হাজার সদস্যের ডিপিএলের সমবায় ও ক্রেডিট সোসাইটির পরিচালন বোর্ড আইএনটিটিইউসি-র হাতে এসেছে। জনসমর্থন সঙ্গে না থাকলে যা কোনও ভাবেই সম্ভব হতো না। তাছাড়া আজ, বুধবার শিল্পাঞ্চলে প্রচারে নামছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে কর্মীদের মনোবল আরও বাড়বে। দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রে বিদায়ী বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফের প্রার্থী না করায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। তবে পুরোদমে প্রচার শুরুর পরে আর কোনও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই বলে দাবি তৃণমূল নেতাদের। দলের জেলা শিল্পাঞ্চল সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সিপিএম নেতারা মুখে যাই বলুন, মানুষ যে তাঁদের আর বিশ্বাস করেন না, সেটা তাঁরাও জানেন। বাড়ি-বাড়ি গিয়েও কোনও লাভ হবে না।’’