বার্নপুরের কারখানা। —নিজস্ব চিত্র।
সংস্থার ভবিষ্যৎ কী, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে এখনও কয়েক মাস সময় লাগবে। কিন্তু তার মধ্যেই সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করে দিয়েছেন বার্নপুরে বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের কর্মীরা। এই অনিশ্চয়তা দূর করার দাবিতে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতিও শুরু করেছেন তাঁরা।
পুরনো এই কারখানা ১৯৯৪ সালে বিআইএফআরের অধীনে চলে যায়। সংস্থার রুগ্ণ অবস্থা দূর করতে ১৭টি বৈঠক হয়। ২০০০ সালে কারখানার পুনরুজ্জীবনের জন্য কর্তৃপক্ষ একটি প্রকল্প জমা দেন। তবে গৃহীত হয়নি। ২০০৯ সালে তৎকালীন রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব বার্ন স্ট্যান্ডার্ডকে রেলের সঙ্গে সংযুক্তির আশ্বাস দেন। কিন্তু বিহারের মজফফরপুর ও মোকামা ইউনিটকে সংযুক্ত করা হলেও বাদ যায় বার্নপুর ও হাওড়া ইউনিট। এই বছরের মে মাসে দেউলিয়া বিধি মেনে সংস্থা গিয়েছে ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনালে।
আর তার পরেই আশঙ্কায় ভুগছেন সংস্থার শ্রমিক-কর্মীরা। গোটা বিষয়টিতে তাঁরা রূপনারায়ণপুরের হিন্দুস্তান কেবলস কারখানার ছায়া দেখছেন। তবে তাঁদের দাবি, কেবলস প্রায় ১৩ বছর উৎপাদনহীন ছিল। কিন্তু গত মে মাসেও নতুন-পুরনো মিলিয়ে ১১৪টি ওয়াগন বানিয়েছেন বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের কর্মীরা।
কারখানা বাঁচাতে সব ক’টি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন মিলে ‘বার্ন স্ট্যান্ডার্ড সেভ কমিটি’ গড়েছেন। কমিটিতে যোগ দিয়েছে বিএমএস এবং আইএনটিটিইউসি-ও। শ্রমিক নেতাদের দাবি, প্রতি মাসে গড়ে ১১০টি করে ওয়াগন তৈরি হচ্ছে। এর পরেও কারখানা গোটানোর চক্রান্ত শুরু হয়েছে। যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক তথা বিএমএস নেতা অনিল সিংহ বলেন, ‘‘রুটি-রুজির লড়াইয়ে আমরা সবাই এক হয়ে লড়ছি।’’
রুগণ্ যে পথে
১৯১৮: ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড ওয়াগন কোম্পানির প্রতিষ্ঠা
১৯৭৫: সংস্থার জাতীয়করণ
১৯৭৬: বার্ন অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে সংযুক্তি। আত্মপ্রকাশ বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কোম্পানির।
১৯৮৭: বিবিইউএনএল-এর অন্তর্গত।
১৯৯৪: রুগণ্ সংস্থা হিসেবে বিআইএফআর-এ অন্তর্ভুক্ত
কিন্তু এই লড়াইয়ের ভবিষ্যত নিয়ে সন্দিহান সংস্থার ২৯১ জন স্থায়ী ও ১৬৫ জন অস্থায়ী কর্মী। গোটা বিষয়টি নিয়ে সংস্থার ১২ জন আধিকারিকের কেউই মুখ খুলতে চাননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংস্থার এক অফিসার বলেন, ‘‘যন্ত্রপাতি ছাড়াও বার্নপুর, রানিগঞ্জ, দুর্গাপুর গলফাবাড়ি মিলিয়ে কারখানার প্রায় হাজার কোটি টাকার ভূ-সম্পত্তি আছে। এর পরেও কেনো দেউলিয়া, বুঝতে পারছি না।’’
সরকারের প্রক্রিয়া শুরু হতে বার্ন কলোনিতেও আশঙ্কার ছায়া। এক কর্মী বিনয় মিশ্র বলেন, ‘‘ছেলে পড়ে দশম শ্রেণিতে। মেয়ে সবে স্কুলে ভর্তি হয়েছে। কারখানা বন্ধ হলে পরিবার নিয়ে অথৈ জলে পড়ব।’’ শোনার পর থেকেই রাতের ঘুম গিয়েছে এক কর্মীর স্ত্রী স্বপ্না সেনগুপ্তর। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেমেয়ের পড়াশোনা এ বার মাঝ পথেই বন্ধ হয়ে যাবে।’’
২০১০-এর রেল বাজেটে কোনও উল্লেখ না থাকলেও সেই বছর ১১ জুন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা হঠাৎই কারখানাকে রেলের সঙ্গে সংযুক্তির কথা ঘোষণা করে। ঘুড়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিলো সংস্থাটি। সুদিনের আশায় বুক বেঁধেছিলেন শ্রমিক-কর্মীরা। টানা সাত বছর লড়াইও করেছেন। কিন্তু এখন পড়েছেন রীতিমতো ভাবনায়।