ভোটার ধরতে সাত সকালে গঙ্গার ঘাটে

আইপিএলের ক্রীড়াসূচি, ১৪২২-এর বাংলা ক্যালেন্ডারের পরে এ বার ভোটার ধরতে ভাগীরথীর ঘাটে দাঁড়িয়ে এবং বাজার ঘুরে প্রচার চালাল সিপিএম। তাদের দাবি, বছরের প্রথম দিনে এই উদ্যোগে সবার সঙ্গে দেখা করে শুভেচ্ছা জানানোও হল, আবার ফাঁকতালে প্রচারটাও হয়ে গেল। প্রতি বছরই পয়লা বৈশাখের সকালে কালনার মহিষমর্দিনী ঘাটে হাজারো মানুষ গঙ্গাস্নানে আসেন। অনেকে এখান থেকেই সোজা দোকানে গিয়ে নতুন হালখাতা করন। অনেকে আবার গণেশ পুজো তোড়জোড় শুরু করেন। ফলে ব্যবসায়ী এবং এলাকার সাধারণ মানুষ দু’পক্ষকেই হাতের কাছে পেতে ঘাটকেই নিশানা করে সিপিএম।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৪৩
Share:

চকবাজারে প্রচারে সিপিএম প্রার্থীরা।

আইপিএলের ক্রীড়াসূচি, ১৪২২-এর বাংলা ক্যালেন্ডারের পরে এ বার ভোটার ধরতে ভাগীরথীর ঘাটে দাঁড়িয়ে এবং বাজার ঘুরে প্রচার চালাল সিপিএম। তাদের দাবি, বছরের প্রথম দিনে এই উদ্যোগে সবার সঙ্গে দেখা করে শুভেচ্ছা জানানোও হল, আবার ফাঁকতালে প্রচারটাও হয়ে গেল।

Advertisement

প্রতি বছরই পয়লা বৈশাখের সকালে কালনার মহিষমর্দিনী ঘাটে হাজারো মানুষ গঙ্গাস্নানে আসেন। অনেকে এখান থেকেই সোজা দোকানে গিয়ে নতুন হালখাতা করন। অনেকে আবার গণেশ পুজো তোড়জোড় শুরু করেন। ফলে ব্যবসায়ী এবং এলাকার সাধারণ মানুষ দু’পক্ষকেই হাতের কাছে পেতে ঘাটকেই নিশানা করে সিপিএম। আর যাঁদের দেখা ঘাটে মিলল না, তাঁদের ধরতে পরে বাজারমুখোও হন নেতারা। হাতে থলি নিয়ে মাছ বিক্রিতার সঙ্গে দরদামে ব্যস্ত অনেকেই আচমকা প্রার্থীদের ডাক শুনে থমকে যান। অনেকে আবার হেসে ভোট দেওয়ার আশ্বাসও দেন।

বুধবার সকাল ৮টা নাগাদ গলায় দলের উত্তরীয় জড়িয়ে একে একে ঘাটে হাজির হন ১৮টি ওয়ার্ডের প্রার্থীরা। সঙ্গে পতাকা, ফেস্টুন, দলীয় পতাকা নিয়ে ছিলেন কর্মী-সমর্থকেরাও। স্নান সেরে উঠে আসা ভোটারদের প্রথমে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান তাঁরা। তারপর দু’চার মিনিট হাল হকিকত জিজ্ঞেস করেই তাঁদের হাতে ধরিয়ে দেন একটি করে ছাপানো লিফলেট। যাতে লেখা রয়েছে, কেন বামপন্থীদের ভোট দেবেন। সাতসকালে ভিজে গায়ে প্রার্থীদের এভাবে দেখে মানুষজন প্রথমে কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও পরে ভালই সাড়া দেন। মহিষমর্দিনী ঘাটে স্নান করতে এসেছিলেন স্থানীয় গনেশ অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিবারই এই দিনে স্নান করতে আসি। এ বারই প্রথম দেখলাম ঘাটের কাছে এসে একটি রাজনৈতিক দল ভোট প্রচারে নেমেছে। বিষয়টির মধ্যে অভিনবত্ব রয়েছে।’’ সিপিএম নেতাদেরও দাবি, গতানুগতিক প্রচারের ধরণ থেকে বেরিয়ে মানুষের সঙ্গে সংযোগ করায় ভাল সাড়া মিলছে।

Advertisement

ঘণ্টাখানেক ঘাটে কাটিয়ে সিপিএম প্রার্থীরা হাঁটা দেন কাছাকাছি চকবাজার এলাকার দলীয় কার্যালয়ে। সেখানে মিনিট ২০ লিকার চা আর মুড়ি-সিঙাড়ায় বিশ্রাম নিয়ে ফের নেমে পড়েন প্রচারে। ঘড়িতে তখন সাড়ে ৯টা। কালনা শহরের সবচেয়ে বড় বাজার, চকবাজারে তখন পা ফেলার জায়গা নেই। মাছবাজার, চাল পট্টি, সব্জি পট্টি, কাপড় পট্টি, মুদিখানা— সব জায়গায় বছর প্রথম দিনের বিশেষ খাওয়াদাওয়ার মালমশলা কিনতে ব্যস্ত খরিদ্দারেরা। তারমধ্যেই ভিড় ঠেলে একে একে বিভিন্ন বাজারে ঢোকেন সিপিএম প্রার্থীরা। শুরু হয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছে জোড় হাত করে ভোট চাওয়া। বাজারে ঘোরার সময় সবার আগে চলছিলেন পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা চার নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী গৌরাঙ্গ গোস্বামী। সিপিএম কর্মীরা বলতে থাকেন, ‘পেশায় চিকিৎসক গৌরাঙ্গবাবুকে পুরপ্রধান করতে পারেন আপনারাই।’ কথার ফাঁকেই কেউ মাটিতে বসে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন, কেউ বা দূর থেকে হাতজোড় করে নির্বাচনে বামপন্থীদের পাশে থাকার আর্জি জানান।

প্রচার চলাকালীনই কয়েকজন ব্যবয়াসীর মধ্যে গুঞ্জন ওঠে। তাঁরা বলাবলি করতে থাকেন, ‘‘দেওয়াল লিখন, ব্যানার, ফেস্টুন, পথসভা এবং মিটিং মিছিলের বাইরে বামপন্থীদের ভোট প্রচারে দেখা যায় নি। কি এমন হল যে চেনা ছক ভেঙে বেরিয়ে এলেন তাঁরা?’’ সব্জি ব্যবসায়ী মনোরঞ্জন দাস বলেন, ‘‘বিষয়টির মধ্যে অভিনবত্ব রয়েছে।এর আগে এভাবে নববর্ষের দিন কেউ প্রচার করেনি।’’ এক মাছ বিক্রেতা সাহেব ঘোষের বক্তব্য, ‘‘ভোটাররা কাকে ভোট দেবেন তা তাঁদের নিজস্ব ব্যাপার। তবু ভোট চেয়ে কেউ এগিয়ে এলে তাকে না তো করা যায় না।’’ তাঁর দাবি, ‘‘পয়লা বৈশাখের দিন একটি রাজনৈতিক দলের ভোটারদের কাছে এভাবে পৌঁছানোর মধ্যে সদর্থক দিক রয়েছে।’’

কিন্তু এই দিনটাকেই কেন বেছে নিল সিপিএম? গৌরাঙ্গবাবু বলেন, ‘‘এমন অনেক ভোটার আছেনস যাঁরা ভোর হলেই পেশার টানে বেরিয়ে যান। বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই ভোটারদের পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু পয়লা বৈশাখে হালখাতা করতে এরা অনেকেই বাজারে হাজির থাকেন। তাই এই দিনটাকে বেছে নেওয়া।’’ সিপিএমের কালনা জোনাল কমিটির সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বাঙালির কাছে নতুন বছরের তাৎপর্যই আলাদা। দলের তরফে ভাগীরথীর ঘাটে এবং চকবাজারে সাধারন মানুষকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। সঙ্গে বলা হয়েছে কেন তারা বামপন্থীদের বাছবেন। তাঁর দাবি, ‘‘গোটা বিষয়টি নিয়ে সাধারন মানুষের মধ্যে দারুন উৎসাহ ছিল। আশা করা যায় ভোট বাক্সে এর ফল মিলবে।’’

যদিও বিরোধীদের এই উদ্যোগকে মোটেই আমল দিতে রাজি নন পুরপ্রধান তথা কালনার তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু। প্রতিবারের মতো এ বারেও সকালে পারিবারিক দোকানে ছিলেন তিনি। এ বার পুরভোটে সাত নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী তিনি। সিপিএমের এ হেন প্রচার নিয়ে বললেন, ‘‘এসব তো এতদিন ডানপন্থীরাই করেছে। ওরা তো ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না। তবে পয়লা বৈশাখের দিন এ সব করে কিছু হবে না। শহরের মানুষ তৃণমুলের পক্ষেই রায় দেবেন।’’

—নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement