খনি বন্ধের খবর চাউর হওয়ার পরে শ্রমিক ও এলাকাবাসীর বিক্ষোভ। বন্ধ থাকল কয়লা পরিবহণও। নিজস্ব চিত্র
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সোদপুর এরিয়ার মাউথডিহি খনিতে কয়লা উত্তোলন বন্ধ করল ইসিএল। কাজে এসে শ্রমিকেরা জানতে পারেন, এই খনিতে কোনও কাজ হবে না। এই খবর চাউর হতেই আধিকারিকদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান শ্রমিক ও লাগোয়া সোদপুর গ্রামের কয়েকশো বাসিন্দা। এর জেরে কয়লা পরিবহণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
ইসিএল কর্তৃপক্ষ জানান, গত বছর ১৪ নভেম্বর লিখিত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, ১৫ জানুয়ারি থেকে এই কোলিয়ারিতে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ বলবৎ হবে। ১৫ নভেম্বর টানা ২৪ ঘণ্টা কয়লা উত্তোলন ও পরিবহণ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ দেখান কোলিয়ারির প্রায় চারশো কর্মী। শেষমেশ শ্রমিক নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করে কর্তৃপক্ষ খনির কাজ বন্ধ না করার আশ্বাস দিলে, বিক্ষোভ ওঠে। তার পরে গত দু’মাস কোলিয়ারিতে অচলাবস্থা তৈরি হয়নি। বুধবারও খনিতে কয়লা তোলা হয়।
শ্রমিকেরা জানান, এ দিন সকালে কাজে যোগ দিতে এসে জানা যায়, ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ বলবৎ হয়ে গিয়েছে। শুধু ভূগর্ভ থেকে তোলা কয়লা পরিবহণ করা হবে। এর পরেই শুরু হয় বিক্ষোভ। গ্রামবাসী কয়লাবোঝাই ডাম্পার আটকে দেন। বন্ধ হয় পরিবহণ।
খনির শ্রমিক সংগঠনগুলির সমন্বয়ে তৈরি ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’র আহ্বায়ক পতিতপাবন সেন বলেন, ‘‘কোলিয়ারি বন্ধ না করার আশ্বাস দেওয়া হলেও সে কথা রাখা হল না। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে। এখানে প্রচুর কয়লা মজুত আছে।’’ গ্রামবাসীর তরফে জন বক্সীর আশঙ্কা, ‘‘কোলিয়ারি গ্রামে জল, বিদ্যুৎ দেয়। পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ করা হয়। মাটির তলায় বালি ভরাট করে খনি ধস আটকানোর ব্যবস্থাও করেন এই খনির লোকজন। কোলিয়ারি বন্ধ হলে এ সব পরিষেবাও বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা বিপাকে পড়ব।’’
যদিও খনির ম্যানেজার রবীন্দ্রনাথ তিওয়ারি বলেন, ‘‘এই খনিটি শ্রমিকদের জন্য আর নিরাপদ নয়। লাভজনকও নয়। প্রতি বছর কমপক্ষে ছ’কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। ভূগর্ভ থেকে আর কয়লা তোলা লাভজনক হবে না। তাই এই সিদ্ধান্ত। ফলে, এখন বিক্ষোভ-ঘেরাও করা হলেও কিছু করার নেই।’’
রবীন্দ্রনাথবাবু জানান, বর্তমানে এখানে প্রায় চারশো শ্রমিক রয়েছেন। বৃহস্পতিবার প্রায় ৮০ জন শ্রমিককে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। বাকিদেরও ধীরে ধীরে বদলি করা হচ্ছে। তাঁরা কে, কোন এরিয়ায় যেতে চান তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে।