—প্রতীকী চিত্র।
ধান কেনায় গতি নেই। এই পরিস্থিতিতে, ধানের সহায়ক মূল্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এর আগে ধান কেনার ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি শিথিল করায় এক শ্রেণির ব্যবসায়ীদের (ফড়ে) দৌরাত্ম্য ফিরে আসার আশঙ্কা জানিয়েছিল নানা শ্রমিক সংগঠন। সহায়ক মূল্য বৃদ্ধির পরে ওই সব সংগঠনের ফের আশঙ্কা, এই টাকা যাবে মূলত ফড়েদের পকেটেই। প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য তা মানতে চাননি। বুধবারই পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন খাদ্য দফতর ও কৃষি দফতরের সঙ্গে ধান কেনা নিয়ে বৈঠক করে। সেখানে বেশ কিছু নিয়মের কড়াকড়ি কমানো, প্রান্তিক এলাকায় আরও বেশি শিবির করে ধান কেনার কথা বলা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
পূর্ব বর্ধমানে এ বার ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ৬,২১,৮০০ টন। এখনও পর্যন্ত কেনা হয়েছে ৪,৬৮,৯৪১ টন। যেখানে হুগলি ৫,২৭,৪২৪ টন বা মুর্শিদাবাদ ৪,৭৪,৫৪০ টন ধান কিনে ফেলেছে, সে তুলনায় পিছিয়ে ‘শস্যগোলা’ বলে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান। হাতে রয়েছে আর মাস দুয়েক। খাদ্য দফতরের দাবি, আমন ধান কেনায় লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনো গেলেও, বোরো ধান বিক্রি করায় তেমন সাড়া নেই। জেলাশাসক প্রিয়ঙ্কা সিংলা বলেন, ‘‘প্রত্যেক বিডিওকে ধান কেনার জন্য বাড়তি উদ্যোগী হতে বলা হয়েছে। বাংলা সহায়তা কেন্দ্রে প্রচার করতে হবে। এ ছাড়া, প্রান্তিক এলাকার চাষিদের কাছে সরাসরি ধান কিনতে বলা হয়েছে।’’
খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সব চাষি যাতে ধান দিতে পারেন, সে জন্য রাজ্য চাষিদের ৪৫ কুইন্টাল করে ধান বিক্রির নিয়ম করলেও, পূর্ব বর্ধমান জেলা ৩০ কুইন্টাল করে কেনা শুরু করে। শেষে দেখা যাচ্ছে, চাষিদেরই দেখা কম। কৃষক-বন্ধু পোর্টালে নাম না থাকা চাষিদের ধান না নেওয়া, জমির সঙ্গে ধানের পরিমাণ মিলিয়ে দেখে কেনা, চালকলগুলির একাংশের ‘অসহযোগিতা’, ধান সংগ্রহ কম হওয়ার নানা কারণ বলে মনে করছেন খাদ্য-কর্তাদের অনেকে। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘অনেকে চাষিদের কাছে ধান কিনে অন্য জেলায় পাঠাতে গুদামে রাখছেন। এ বিষয়ে নজর দিতে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে ঠিক হয়েছে, যে কোনও চাষির কাছে ধান নেওয়া হবে। কোনও নথি প্রয়োজন হবে না। ভাগচাষিরাও ধান বিক্রি করতে পারবেন। খাদ্য নিয়ামক মিঠুন দাস বলেন, ‘‘ধান বিক্রি করতে কৃষকবন্ধু বাধ্যতামূলক রাখার নিয়ম শিথিল করা হল।’’ রাজ্য চালকল সংগঠনের কর্তা আব্দুল মালেকের বক্তব্য, ‘‘খাদ্য দফতর ধান কিনে আমাদের দেয়। আমরা তা ভাঙিয়ে চাল দিয়ে থাকি। তাই আমাদের অসহযোগিতার কোনও প্রশ্ন নেই। খোলা বাজারে ধানের দাম বেশি বুঝে সরকারকে সহায়ক মূল্যবাড়াতে হয়েছে।’’