দুর্গাপুরে ডিভিসির চেয়ারম্যানকে স্বাগত জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। ছবি: বিকাশ মশান।
ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ‘দুর্গাপুর থার্মাল পাওয়ার স্টেশন’ (ডিটিপিএস)-এ ৮০০ মেগাওয়াটের পঞ্চম ইউনিট গড়ার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। ‘দখলকারীরা’ পুনর্বাসনের দাবিতে আন্দোলন করছেন। তবে, শুক্রবার দুর্গাপুরে এসে ডিভিসি-র চেয়ারম্যান এস সুরেশ কুমার জানিয়ে দেন, পুনর্বাসনের কোনও প্রতিশ্রুতি তাঁরা দিচ্ছেন না। চার বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
দুর্গাপুরের মায়াবাজারে ডিভিসি ১৯৬৬-তে ডিটিপিএস গড়ে তোলে। প্রায় বছর তিনেক ধরে উৎপাদনহীন হয়ে পড়ে আছে। সম্প্রতি ডিভিসি নতুন ৮০০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট গড়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সে জন্য, মায়াবাজার, ডিটিপিএস কলোনি-সহ সংলগ্ন এলাকার দখলদারদের এলাকা ফাঁকা করার নোটিস দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। প্রতিবাদে সেই সব বাসিন্দারা ‘দুর্গাপুর ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরক্ষা কমিটি’র নেতৃত্বে পুনর্বাসনের দাবি তুলে আন্দোলন শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে সীমানা পাঁচিল দেওয়ার সময়ে একাধিক বার কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার তাঁরা মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে স্মারকলিপি দেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও আন্দোলনকারীদের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে উপযুক্ত আর্থিক প্যাকেজেরও দাবি করেছে।
শুক্রবার ডিটিপিএস পরিদর্শনে আসেন ডিভিসি-র চেয়ারম্যান সুরেশ। ডিটিপিএস কলোনিতে এলাকার বহু মানুষ নতুন ইউনিটের দাবিতে ব্যানার হাতে চেয়ারম্যানকে স্বাগত জানান। পুনর্বাসন প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে এস সুরেশ বলেন, “জবরদখলকারীরা ডিটিপিএসের কোয়ার্টার্স দখল করে বসে আছেন। তাঁদের সরতেই হবে।” কিন্তু যাঁরা ডিটিপিএসের জায়গায় বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন, পুনর্বাসন চাইছেন, পাঁচিল দেওয়ার কাজ বন্ধ করে দিচ্ছেন, তাঁদের কী হবে? চেয়ারম্যান বলেন, “হাতেগোনা কয়েকজন আছেন। এলাকার মানুষ কারখানার পক্ষে। পুনর্বাসনের কোনও প্রতিশ্রুতি আমরা দিচ্ছি না।”
এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে চেয়ারম্যানের পাশে ছিলেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। সুরেন্দ্র পরে বলেন, “বহু বছর ধরে বসবাস করছেন ওঁরা। পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ করা যায় না। রাজ্য ও কেন্দ্র দুই সরকারকেই এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে।” বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, “আমরা আগেই বলেছি, রাজ্য সরকার জমি দেবে। কেন্দ্র বাড়ি বানিয়ে দেবে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, “হাতেগোনা ক’জন, সেটা রাজ্য সরকারকে সমীক্ষা করে বার করতে হবে।তবে, এক জন হোক বা এক হাজার, উপযুক্ত আর্থিক প্যাকেজ-সহ পুনর্বাসনের দাবিতে আমরা অনড়।” তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, “শিল্প হবে। কিন্তু মানুষ যাতে ঘর না হারান সেটাও দেখতে হবে। রাজ্য সরকার সব সময় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। দরকার হলে রাজ্য সরকারের সহযোগিতা নিক ডিভিসি।”
ডিভিসি-র চেয়ারম্যানের দাবি, কাজ করতে গিয়ে রাজ্য সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা তাঁরা পাচ্ছেন।