দুর্গাপুরের সাহাবাড়িতে। নিজস্ব চিত্র
এক যুগ পরে ফিরে আসে পুজো। দুর্গাপুরের সাহাবাড়িতে বারো বছর পরপর আয়োজন হয় দেবীর আরাধনার। বাকি বছরগুলিতে কখনও পুজো হয় কলকাতা, কখনও কানপুর, কখনও আবার বাংলাদেশে।
দুর্গাপুরের বিধাননগরের সাহাবাড়িতে শেষ বার পুজো হয়েছিল ২০০৭ সালে। একটি গেস্ট হাউস ভাড়া নিয়ে পুজোর আয়োজন হয়েছিল। এ বারও সেখানেই পুজোর আয়োজন চলছে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২৬২ বছর আগে অধুনা বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের সহবতপুরে প্রয়াত ব্যবসায়ী ব্রজরাম সাহা পুজোর প্রচলন করেন। দেশ ভাগ ও নানা কারণে পরিবারের সদস্যেরা পরে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যান। ১৯৪৭ সালের পরে তিন শরিক ভাগাভাগি করে পুজো শুরু করেন। পরে শরিকেরা আবারও ভাগ হয়ে যান। এখন ১২ বছর ছাড়া এক-এক শরিকের পুজোর দায়িত্ব পড়ে। এক শরিক বাংলাদেশে থাকেন। ২০১৭ সালে সেখানে পুজো হয়েছিল। দুর্গাপুরের বাসিন্দাদের কাছে এই পুজো ‘ভ্রাম্যমাণ দুর্গাপুজো’ হিসাবে পরিচিত।
কলকাতার শোভাবাজারে সাহাবাড়িতে ১৯৭১ সালে রাজনৈতিক কারণে পুজো আয়োজন করা যায়নি। সে বার প্রথম পুজো হয় দুর্গাপুরে। তার পরে ১২ বছর অন্তর এখানে পুজো হয়েছে। ডিএসপি কারখানার প্রাক্তন আধিকারিক নীরেন্দ্রকুমার সাহার বাড়িতে এ নিয়ে চার বার পুজো হচ্ছে। তিনি জানান, বাড়িতে জায়গায় অভাব। তাই গেস্ট হাউস ভাড়া নিয়ে পুজো করা হচ্ছে। নানা জায়গা থেকে পরিবারের অনেকে পুজোয় আসেন।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে পুজো শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রতিমার বৈশিষ্ট্য, দুর্গার ডান দিকে থাকেন সরস্বতী ও কার্তিক। বাঁ দিকে লক্ষ্মী ও গণেশ। সপ্তমীতে দুর্গার পাশে কালীমূর্তি রেখে দক্ষিণা কালীর পুজো হয়। সে রাতেই কালীর বিসর্জন। একাদশীর সকালে সূর্যোদয়ের সময়ে নারায়ণপুজো করে উৎসবের সমাপ্তি ঘটে। বৈষ্ণব মতে পুজো হয়। নীরেন্দ্রকুমারবাবু বলেন, ‘‘বারো শরিকের বাড়ি ঘুরে-ঘুরে পুজো হয়। আবার ১২ বছর পরে আমার বাড়িতে পুজো হবে। তত দিন বাঁচব কি না জানি না!’’ বিধাননগরের বাসিন্দা তপন রায় বলেন, ‘‘আর পাঁচটা পারিবারিক দুর্গাপুজোর চেয়ে কিছুটা আলাদা সাহাবাড়ির পুজো। তাই বাড়তি আকর্ষণ রয়েছে এই পুজো ঘিরে। ১৯৯৫ সালে পুজো হয়েছিল নীরেন্দ্রকুমারবাবুর বিধাননগরের গ্রীসম স্ট্রিটের বাড়িতে। তার পর থেকে গেস্ট হাউস ভাড়া নিয়ে পুজো হচ্ছে।’’