উপরে, কাটোয়া অগ্রদ্বীপের মণ্ডপে স্যানিটাইজ়ার টানেল। নীচে, জাজিগ্রামের মণ্ডপে বসেছে ব্যারিকেড। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়
হাইকোর্টের রায়ের পরেই বিভিন্ন পুজো-কর্তাদের কাছ থেকে তা মানার মুচলেকা নিতে শুরু করেছে পুলিশ। তার পরেও সবাই রায় মানবেন, এমন নিশ্চয়তা মিলছে না। আবার জেলার একাংশ পুজো উদ্যোক্তা রায় মেনে ইতিমধ্যেই মণ্ডপ থেকে দূরে ব্যারিকেড করেছেন। মণ্ডপের বাইরে ‘জায়ান্ট স্ক্রিন’ এবং বাড়িতে বসে ‘লাইভ’ পুজো দেখানোরও ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
বর্ধমান শহরের পুলিশ লাইনের কাছে একটি স্কুলের ভিতরে পদ্মশ্রী সঙ্ঘের পুজো হয়। ক্লাবের সম্পাদক স্বপন দাসের দাবি, ‘‘হাইকোর্টের রায়ের পরে কোনও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান রাখা হচ্ছে না। মণ্ডপের বাইরে পাড়ার মানুষজনের জন্য ‘জায়ান্ট স্ক্রিন’ বসানো হবে। বাড়িতে বসে পুজো দেখে অঞ্জলি দেওয়ার ব্যবস্থা করারও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’’ মেমারির সারদাপল্লি-অরবিন্দপল্লি পুজো কমিটিও ‘লাইভ’ পুজো দেখানোর ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই কমিটির কর্তাদের দাবি, আদালতের রায় মেনেই পুজো করা হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পুজোর ‘লাইভ’ সম্প্র্চার দেখা যাবে।
অনলাইনে পুজো দেখার বার্তা দিয়ে আজ, বুধবার থেকে বর্ধমান শহরের বিভিন্ন জায়গায় হোর্ডিং লাগাতে চলেছে আলমগঞ্জ বারোয়ারি। সেখানকার কর্তা মণীশ সিংহ বলেন, ‘‘সরকারের নির্দেশ ও হাইকোর্টের রায় আমরা মানতে বাধ্য। প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মণ্ডপের সামনে জায়ান্ট স্ক্রিন থাকবে। সোশ্যাল মিডিয়া ও ইউটিউব পেজে পুজো দেখা যাবে।’’ ভার্চুয়াল পথে হাঁটতে গিয়ে তাঁদের বহু টাকা বাড়তি খরচা হয়েছে বলে দাবি তাঁর। শহরের লাল্টু স্মৃতি সঙ্ঘও মণ্ডপের বাইরে ‘নো এন্ট্রি জ়োন’ করে ব্যারিকেড দিচ্ছে। ক্লাবের সম্পাদক তন্ময় সামন্ত বলেন, ‘‘হাইকোর্টের নির্দেশ মানব বলে মুচলেকা দিয়েছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় পুজো লাইভ করার চিন্তাভাবনা রয়েছে।’’ সবুজ সঙ্ঘের তরফেও জানানো হয়েছে, মানুষের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য সমস্ত নির্দেশ মেনে পুজো করা হবে। ‘ভার্চুয়াল’ মাধ্যমে পুজো দেখতে পাবেন দর্শকেরা। কালনা শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড পুজো কমিটির কর্তা অমিত নন্দীও বলেন, ‘‘রায় মেনে ১০ মিটার দূরে ব্যারিকেড করছি।’’
তবে পুজোর তিন দিন আগে এমন নির্দেশ আসায় ক্ষতি হয়ে গেল, দাবি করেছে বেশ কিছু পুজো কমিটি। কাটোয়ার সবুজ সঙ্ঘ-সহ বেশ কিছু পুজো কমিটির কর্তার দাবি, নতুন করে খরচ করে ব্যারিকেড বসানো, ‘জায়ান্ট স্ক্রিন’ বা ‘ভার্চুয়াল’ পুজো দেখানো সম্ভব নয় তাঁদের পক্ষে। কালনার কয়েকজন উদ্যোক্তাও একই দাবি করেছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘সরকারের প্রথম নির্দেশ মেনে আমরা মাস্ক, স্যানিটাইজ়ারের ব্যবস্থা করেছি। আর খরচ করা সম্ভব নয়। লোক ঢুকলে কী করব, জানি না।’’ সে ক্ষেত্রে পুলিশ বা প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেবে জানতে চাওয়া হলে জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, রাজ্য সরকারের নির্দেশিকার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তাঁরা। নির্দেশ পেলে সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘যেমন নির্দেশ আসবে তেমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে রাজ্য স্তরে পুজো কমিটিদের সংগঠন ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব কমিটি’ হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছে। আজ, বুধবার তা নিয়ে শুনানি রয়েছে। সে দিকে তাকিয়ে রয়েছে বর্ধমান শহরের কেশবগঞ্জ চটি-সহ মাঝারি মাপের বেশ কিছু পুজো কমিটি। পুলিশেরও দাবি, শুনানির পরে নির্দেশ এলে সেই মতো ব্যবস্থা করা হবে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। তবে সরকারের স্পষ্ট নির্দেশ না এলে কী ব্যবস্থা হবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়।’’ যদিও চিকিৎসক থেকে সচেতন নাগরিকদের বড় অংশেরই বক্তব্য, পুজো কমিটিগুলির নিজেদেরই সচেতন ভাবে এই পদক্ষেপ করা উচিত ছিল। তা হলে আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হত না।