Asansol

স্বনির্ভরতা ও নারীর স্বাস্থ্য সচেতনতাই লক্ষ্য পল্লবীর 

তাঁর লক্ষ্য, আসানসোল ও দুর্গাপুরের দু’টি যৌনপল্লির শিশুদের নিজের কাছে রেখে পড়াশোনা শেখানো। সেই লক্ষ্যে, রূপনারায়ণপুরের নেতাজিনগর কলোনিতে ছ’বিঘা জমি কিনে আবাসস্থল তৈরির চেষ্টা করছেন তিনি। 

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২০ ০০:৪২
Share:

রূপনারায়ণপুরের পল্লবী হালদার। ছবি: পাপন চৌধুরী

ক্যানসার আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে তাঁর মনে হয়েছিল, মেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোটা অত্যন্ত জরুরি। মায়ের মৃত্যুর পরেই জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিটা পুরোপুরি বদলে গেল রূপনারায়ণপুরের পল্লবী হালদারের। আর্থ-সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মহিলাদের স্বনির্ভর করা এবং প্রত্যন্ত এলাকায় নারী স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতনতা তৈরি, এই দুই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রায় সাত বছর ধরে কাজ করে চলেছেন তিনি।

Advertisement

বছর ৪৭-এর পল্লবী আপার কেশিয়া লাগোয়া হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সরণির বাসিন্দা। কী ভাবে শুরু হল তাঁর পথচলা? তিনি জানান, ২০১২-য় ন্যাশনাল জুট কর্পোরেশনের কলকাতা অফিসে যাতায়াত শুরু করেন। সেখান থেকেই পাটের বিভিন্ন শৌখিন সামগ্রী তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের খরচেই ২০১৩-য় রূপনারায়ণপুরের জোড়বাড়িতে প্রশিক্ষণ শিবির খোলেন তিনি। নিজস্ব যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে ২০ জন মহিলাকে নিয়ে আসেন শিবিরে। বছর ঘুরতেই আশপাশের আরও বহু মহিলা এই শিবিরে এসে যোগ দেন। ‘ছাত্রীদের’ সংখ্যা বাড়ায় কলকাতা, বহরমপুর, বাঁকুড়া থেকেও প্রশিক্ষক নিয়ে আসেন তিনি। পরে, পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় নিয়মিত প্রশিক্ষণ শিবির আয়োজন করতে থাকেন। পল্লবী বলেন, ‘‘শিবিরে তৈরি জিনিসপত্র রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় হওয়া সরকারি হস্তশিল্প মেলায় বিক্রি করি আমরা। প্রায় দু’হাজার মহিলা বিনামূল্যে শিবির থেকে প্রশিক্ষণ পেয়ে স্বনির্ভর হয়েছেন। প্রথম দিকে শিবির চালাতে নিজের খরচ হলেও, পরে এলাকার অনেক বিশিষ্ট মানুষও শিবির চালাতে পাশে দাঁড়ান।’’

কিন্তু কেন এই কাজ?

Advertisement

পল্লবী বলেন, ‘‘২০১১-য় মায়ের চিকিৎসার সময়ে বারবার হাসপাতালে যেতে হত। সেই সময়েই মনে হয়, মেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিত। তা হলেই সমাজের উন্নতি। সংসারেরও সুরাহা হবে।’’ তবে, ওই প্রশিক্ষণ শিবিরের কাজ করার পাশাপাশি, নারী-স্বাস্থ্যের জন্যও কিছু করার ইচ্ছে জাগে স্নাতক পাশ পল্লবীদেবীর। সেই লক্ষ্যেই পাটের সামগ্রী পাশাপাশি, প্রশিক্ষণ শিবির থেকেই শুরু করলেন স্যানিটারি প্যাড তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া। ২০১৮-য় দুর্গাপুরে প্রথম এ বিষয়ে একটি প্রশিক্ষণ শিবির তৈরি করেন। পল্লবীদেবী বলেন, ‘‘বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত এলাকায় মহিলাদের মধ্যে শিবিরে তৈরি স্যানিটারি প্যাড বিনামূল্যে বিতরণ করছি আমরা।’’

পল্লবী জানান, এই কাজে তিনি পাশে পেয়েছেন পরিবারকেও। ২০১৬-য় স্বামী তপন হালদার প্রয়াত হয়েছেন। বাড়িতে রয়েছেন পেশায় সিএলডব্লিউ-র কর্মী, ছেলে আকাশ। মেয়ে প্রিয়াঙ্কার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আকাশ বলেন, ‘‘মা যা করছেন, তাতে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে আমার। মায়ের জন্য গর্ব হয়।’’

তবে এখানেই থেমে থাকছেন না পল্লবীদেবী। তাঁর লক্ষ্য, আসানসোল ও দুর্গাপুরের দু’টি যৌনপল্লির শিশুদের নিজের কাছে রেখে পড়াশোনা শেখানো। সেই লক্ষ্যে, রূপনারায়ণপুরের নেতাজিনগর কলোনিতে ছ’বিঘা জমি কিনে আবাসস্থল তৈরির চেষ্টা করছেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement