গ্যাস সংযোগের উদ্বোধন। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে। নিজস্ব চিত্র।
পাইপলাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি রান্নার গ্যাস সরবরাহের সূচনা হল দুর্গাপুরে। বৃহস্পতিবার সেল কো-অপারেটিভ এলাকার একটি বাড়িতে সংযোগ দিয়ে পরিষেবার সূচনা করেন ডিএসপি-র ডিরেক্টর ইন-চার্জ বিপি সিংহ। ছিলেন গ্যাস সংস্থার আধিকারিকেরাও।
জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের জগদীশপুর থেকে হলদিয়া পর্যন্ত গ্যাসের পাইপলাইন পাতার কাজ করছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা গেল। সেই পাইপলাইন থেকে বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি গ্যাস পৌঁছে দিতে ২০১৮ সালে দরপত্র চায় কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস নিয়ন্ত্রক পর্ষদ। এ রাজ্যে দুই বর্ধমান জেলায় গ্যাস সরবরাহের জন্য যৌথ ভাবে বরাত পায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল ও একটি বেসরকারি সংস্থা। পানাগড়ে ‘সোর্স পয়েন্ট’ তৈরি করা হয়েছে। সেখান থেকে পাইপলাইন পাতা হচ্ছে জেলা জুড়ে।
সেই প্রকল্পের আওতায় এ দিন দুর্গাপুর শহরে বাড়িতে ‘পাইপড ন্যাচরাল গ্যাস’-এর (পিএনজি) সংযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হল। বছরখানেক আগে কাঁকসার গোপালপুরে প্রথম পিএনজি গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার কাজ শুরু হয়। বর্তমানে সেখানে প্রায় দেড় হাজার বাড়িতে রান্না হচ্ছে পিএনজি দিয়ে। এ ছাড়া, কিছু হোটেল, রেস্তোরাঁতেও এই সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
ওই যৌথ সংস্থার প্রকল্প প্রধান শুভজিৎ চক্রবর্তী (বর্ধমান জিয়োগ্রাফিক্যাল এরিয়া) জানান, সংযোগ পেতে গ্রাহককে ৭,১১৮ টাকা জমা দিতে হয়। এর মধ্যে ৭ হাজার টাকা ফেরতযোগ্য। গ্রাহককে একটি মিটার দেওয়া হয়। গ্যাস খরচের হিসাব মিলবে মিটারের কাঁটায়। সেই অনুযায়ী বিল দিতে হয় গ্রাহককে। বিল আসে প্রতি দু’মাসে। গ্যাস বুকিং করে সিলিন্ডারের জন্য হাপিত্যেস করে অপেক্ষা করা, সিলিন্ডার তোলা-নামানোর সমস্যা বা গ্যাসের সিলিন্ডারের ওজন কম থাকার মতো পরিস্থিতি আর তৈরি হবে না। আবার চোখের সামনে মিটারের কাঁটা থাকায় গ্যাসের খরচ নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব হবে। এই প্রক্রিয়ায় সিলিন্ডার থেকে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও দূর হবে। কারণ, এলপিজি গ্যাস নীচে থিতু হয়ে যায়। সেখানে পিএনজি জানলার ফাঁক দিয়ে বা ঘুলঘুলি দিয়ে বেরিয়ে বাতাসে মিশে যায়। তিনি বলেন, ‘‘গ্রাহকদের আর্থিক ভাবেও অনেক সাশ্রয় হবে। এলপিজি-র থেকে পিএনজি দামে প্রায় ১৫ শতাংশ সস্তা। এলপিজি সিলিন্ডার শেষ হয়ে গেলেও নীচে কিছু গ্যাস রয়ে যায়, যা কাজে আসে না। পিএনজি সংযোগে সে সবের বালাই নেই।’’
শুভজিৎ আরও জানান, পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক পর্যন্ত দুই জেলার আড়াই লক্ষ বাড়িতে সংযোগের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে ২০৩০ সাল। দুই জেলার ৩১টি ব্লকেই পৌঁছতে হবে। দুর্গাপুর শহরে ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে ২০ হাজার সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
এ দিন যাঁর বাড়িতে শহরের প্রথম পিএনজি গ্যাসের সংযোগ চালু হল, সেই সুশান্তকুমার রায় বলেন, ‘‘দারুণ অভিজ্ঞতা। বড় বড় শহরে এমন ব্যবস্থা আছে জানতাম। এ বার আমাদের এখানেও চালু হয়ে গেল। আমি অন্যদের বলব, নতুন এই সংযোগ নিতে।’’ ডিএসপি-র ডিরেক্টর ইন-চার্জ বিপি সিংহ বলেন, ‘‘নানা বড় শহরে এমন গ্যাসের সংযোগ আমরা
দেখেছি। এ বার দুর্গাপুরেও শুরু হল। মাঝে সামান্য বিলম্ব হয়েছে। তবে এখন খুব দ্রুত কাজ এগোচ্ছে। আশা করি দ্রুত গ্রাহকদের ঘরে নতুন সংযোগ পৌঁছে যাবে।’’