চিকিৎসক বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে বদলির নির্দেশ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আরজি করের মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পর পরই বেশ কিছু চিকিৎসক এবং আধিকারিকের নাম প্রকাশ্যে আসে। উঠেছে ‘প্রভাবশালী’ তত্ত্বও। সেই তালিকায় ছিলেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক বিরূপাক্ষ বিশ্বাস। এ বার তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করল স্বাস্থ্য দফতর। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে বিরূপাক্ষকে সরিয়ে কাকদ্বীপে পাঠানো হল।
দিন কয়েক আগে সামজমাধ্যমে একটি অডিয়ো ভাইরাল হয়। সেই অডিয়োর সূত্র ধরেই উঠে আসে বিরূপাক্ষের নাম। দাবি করা হয়, সেই অডিয়োর কণ্ঠস্বর বিরূপাক্ষের। সেই অডিয়োতে ‘হুমকি’ দিতে শোনা গিয়েছিল। অভিযোগ, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে চলত বিরূপাক্ষের ‘দাদাগিরি’। কথা না শুনলে তিনি হুমকিও দিতেন বলে অভিযোগ। সেই অভিযোগকে কেন্দ্র করে শোরগোল পড়ে যায়। বিরূপাক্ষ যদিও এই অডিয়োটি সাজানো বলে সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দেন।
তার মধ্যেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের সেমিনার হলের একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে। সেই ভিডিয়োটি চিকিৎসক খুনের পরের বলেও দাবি করা হয়। সেখানে অনেককে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল। অভিযোগ, খুনের ঘটনাস্থলে ঢুকে পড়েছিলেন বহিরাগতেরা। যা নিয়ে পুলিশ পরে ব্যাখ্যাও দেয়। তবে সেই ভিডিয়োতে নাকি বিরূপাক্ষকে দেখা গিয়েছিল। তিনি কেন সেখানে গিয়েছিলেন, সে প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা (যদিও ভাইরাল হওয়া অডিয়ো বা ভিডিয়ো— কোনওটারই সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন) ।
অডিয়ো, ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই বিরূপাক্ষকে সরানোর দাবি ওঠে। সেই আবহেই স্বাস্থ্য দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করে ওই চিকিৎসকের বদলির নির্দেশ দিল। জানানো হয়েছে, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের প্যাথোলজি বিভাগের সিনিয়র আবাসিক চিকিৎসক বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে বদলি করা হচ্ছে। কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে সিনিয়র আবাসিক চিকিৎসক হিসাবে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কথাও বলা হয়।
এই বদলি নিয়ে সরব বর্ধমান মেডিকেল কলেজের আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা। তাঁদের দাবি, বদলির নির্দেশনামায় দেখা যাচ্ছে স্বাস্থ্য ভবন গত বছর ১১ অগস্টে তাঁকে সরানোর জন্য বলেছিল। শুধুমাত্র অভীক দে-র কারণেই মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ এই নির্দেশ বলবৎ করতে সাহস পাননি বলে অভিযোগ তুলেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের অভিযোগ, শুধুমাত্র বিরূপাক্ষ নন, এ রকম অনেকেই আছেন, যাঁরা অবৈধ ভাবে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত আছেন। অবিলম্বে সেই চিকিৎসকদের চিহ্নিত করে তাঁদের বদলির ব্যবস্থা করুন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই দাবিতেও সরব হয়েছেন আন্দোলনেকারীরা।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা এ বার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরব। চিকিৎসক গৌরাঙ্গ প্রামাণিক বলেন, ‘‘বিরূপাক্ষের বদলির নির্দেশ ছিল ২০২৩ সালের ১১ অগস্ট। অথচ সেই বদলির নির্দেশকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এক বছর বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে থাকলেন তিনি। হাসপাতালে আসতেন না বলেই জানি।’’
এক বছর আগে বিরূপাক্ষকে ছেড়ে দেওয়ার কথা থাকলেও কেন তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিল, সেই প্রশ্নে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চিকিৎসকের অভাবের জন্যই আমরা তাঁকে ছাড়তে পারিনি।এখন স্বাস্থ্য ভবন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাই আমরা তাঁকে ছেড়ে দিলাম। ২০২৩ সালে ৬৬ জন এমন চিকিৎসককে ছেড়ে দেওয়া নির্দেশ ছিল। কিন্তু আমরা সবাইকে ছেড়ে দিলেও ৬-৭ জনকে রেখে দিয়েছিলাম। স্বাস্থ্য ভবন বলেছে তাই বিরূপাক্ষকে ছেড়ে দিলাম। বাকিদেরও ছেড়ে দিতে বললে তাঁদেরও ছাড়তে বাধ্য হব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বর্ধমান মেডিকেল কলেজে রোগীর চাপ প্রচুর। সেই তুলনায় চিকিৎসক কম আছে। বিভিন্ন কারণে চিকিৎসকদের বদলি আটকে আছে।’’