খারাপ অবস্থা স্কুল বাসের। প্রতীকী চিত্র।
ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়ার উপায় নেই। তারা বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত উদ্বেগে থাকতে হয়— পুলকার বা স্কুলবাসে যাতায়াত করা পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা এমন অভিযোগ করেন প্রায়ই। পড়ুয়া নিয়ে যাতায়াত করা গাড়িগুলি নিয়ে নানা সময়ে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। সম্প্রতি জেলায় পরপর বেশ কয়েকটি যাত্রিবাহী বাস দুর্ঘটনায় পড়ার পরে দেখা যায়, সেগুলির ‘স্বাস্থ্য’ ছিল বেহাল। এই পরিস্থিতিতে, জেলা পুলিশ স্কুলবাস ও পুলকারগুলির স্বাস্থ্যপরীক্ষাও করে দেখার পক্ষপাতী। পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন সে জন্য জেলা প্রশাসনকে চিঠিও দিয়েছেন। কিন্তু কতগুলি স্কুলবাস চলছে তার হিসেব থাকলেও, পুলকারের কোনও তথ্য নেই জেলায় পরিবহণ দফতরের কাছে।
জেলা পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়ায় ২৪টি স্কুলবাসের ‘স্বাস্থ্যপরীক্ষা’ করে দেখা গিয়েছে, দু’টির স্বাস্থ্য ‘খারাপ’। সে দু’টিকে জরিমানা করা হয়েছে। পুলিশের তরফে প্রতিটি স্কুলকে বাস বা পুলকারের ‘স্বাস্থ্যপরীক্ষা’ করাতে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। পরিবহণ দফতর সরাসরি স্কুলে গিয়েও তা করা শুরু করেছে। বর্ধমান শহর বা লাগোয়া এলাকায় বেসরকারি নানা স্কুলের বেশিরভাগের নিজস্ব গাড়ি বা বাস নেই। অনেক সরকারি স্কুলেরও নিজস্ব বাস কম। বাধ্য হয়ে বহু পড়ুয়াকে পুলকার বা এজেন্সির বাসে যাতায়াত করতে হয়। এজেন্সির বাসগুলি পরিবহণ দফতরের সব নিয়ম মানে না বলে অভিযোগ। পুলকারে বিশেষ রং ও প্রতীক ব্যবহার, বিশেষ লাইসেন্স নেওয়ার কথা পরিবহণ দফতর থেকে বলা হয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি এখনও। সে সুযোগে বহু ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ি পুলকার হিসেবে চলছে বলে অভিযোগ।
পরিবহণ দফতরের দাবি, জেলায় ৮২টি স্কুলবাস চলে বলে তাদের কাছে তথ্য আছে। কিন্তু পুলকার হিসাবের বাইরে। প্রশাসন গাড়ির ‘ফিটনেস’ শংসাপত্র থাকা বাধ্যতামূলক করেছে। ১২ বছর বয়স পর্যন্ত পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে আসন সংখ্যার তুলনায় দেড় গুণের বেশি পড়ুয়া বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পুলকার চালকদের নির্দিষ্ট পরিচয়পত্র রাখাও বাধ্যতামূলক। স্কুলের গাড়িকে পরিবহণ দফতর থেকে আলাদা ‘পারমিট’ নিতে হয়। গাড়িতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকতে হবে। পুলকারে গাড়ির আসনের নীচে ছাত্রছাত্রীদের ব্যাগ রাখার ব্যবস্থা থাকতে হবে। চালকের সঙ্গে সহায়ক থাকা বাধ্যতামূলক।
এই সব নিয়ম অনেক ক্ষেত্রেই মানা হয় না বলে অভিযোগ। পুলকার মালিকদের আবার দাবি, অভিভাবকেরা ভাড়া বাড়াতে চান না। আর্থিক কারণে অনেকে নির্দিষ্ট ভাড়া দিতে পারেন না। মানবিক কারণে কম ভাড়ায় পড়ুয়া নিয়ে যেতে হয়। বাড়তি রোজগারের আশায় একাধিক স্কুলের পড়ুয়া এক সঙ্গে নিয়ে যান চালকদের একাংশ। এ সব কারণেই সব নিয়ম মানা সম্ভব হয় না।